রাজার দক্ষিণ বাহু স্পশ হইতে লাগিল। তখন তিনি নিজ হস্তকে সম্বোধন করিয়া কহিতে লাগিলেন হে হস্ত! আমি যখন নিতান্ত বিচেতন হইয়া প্রিয়াকে পরিত্যাগ করিয়াছি, তখন আর আমার অভীষ্টলাভের প্রত্যাশা নাই। তবে তুমি কি নিমিত্র বৃথা স্পন্দিত হইতেছে? মনে মনে এই আক্ষেপ করিতেছেন, এমন সময়ে, বৎস! এত দুবৃত্ত হও কেন” এই শব্দ রাজার কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইল। রাজা শ্রবণ করিয়া মনে মনে এই বিতর্ক করিতে লাগিলেন এ অবিনয়ের স্থান নহে। এই অরণ্যে যাবতীয় জীবজন্তু স্থান মাহাত্মে হিংসা, দ্বেষ, মদ, মাৎসর্য প্রভৃতি পরিত্যাগ করিয়া, পরস্পর সৌহার্দে কাল যাপন করে। কেহ কাহারও প্রতি অত্যাচার বা অনুচিত ব্যবহার করে না। এমন স্থানে কে দুৰ্বন্ততা করিতেছে। যাহা হউক, এ বিষয়ের অনুসন্ধান করিতে হইল।
রাজা, এইরূপ কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া, শানুসারে-কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়া দেখিলেন এক অতি অল্পবয়স্ক শিশু সিংহশিশুর কেশর আকর্ষণ করিয়া অত্যন্ত উৎপীড়ন করিতেছে এবং দুই তাপসী সমীপে দণ্ডায়মান আছেন। দেখিয়া চমকৃত হইয়া মনে মনে কহিতে লাগ্নিলেন তপোবনের কি অনির্বচনীয় মহিমা! মানবশিশু সিংহশিশুর উপর অত্যাচার করিতেছে, সিংহশিশু অবিকৃত চিত্তে সেই অত্যাচার সহ্য করিতেছে। অনন্তর, কিঞ্চিৎ নিকটবর্তী হইয়া, সেই শিশুকে নিরীক্ষণ করিয়া প্রেহসপরিপূর্ণ চিতে কহিতে লাগিলেন আপন ঔষ পুকে দেখিলে মন যেরূপ মেহরসে আত্ন হয়, এই শিশুকে দেখিয়া আমার মন সেই রূপ হইতেছে কেন? অথবা আমি পুত্রহীন বলিয়া এই সর্ব্বাঙ্গসুন্দর শিশুকে দেখিয়া, আমার মনে এরূপ প্রগাঢ় স্নেহরসের আবির্ভাব হইতেছে।