পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমার সঙ্গে কথায় পারব না। তুমি আসলে আমার মধ্যে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স জন্মে দিয়েছ। নিজেকে ছোট মনে হয়, অপদাৰ্থ মনে হয়। সুনীল এবার গম্ভীর হয়। তার মুখ দেখে আনিলের মনে হয়, এতদিন জন্মেনি, এখন এই মূহুতো বুঝি তার ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স জন্মালো ! ইনফিরিওরিটি কমপ্লেকস ? সেটা কোখেকে আসবে, কেন আসবে ? ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সের থিয়োরি তুমি জানো, এ বিষয়ে পড়াশোনা করেছ? না শুধু কথাটাই শিখেছি বন্ধুদের কাছে ? তোমার কথাই ধরি,আমার জোরালো প্যাশোনালিটি আছে-কিন্তু একটা চরিত্রের প্রভাবে অন্যের চরিত্রে তো ওই কমপ্লেক্স জন্মায় না ? তোমায় অসহায় পেয়ে যদি অন্যায় অত্যাচার করতাম, তোমার কাছ থেকে জোর করে সেবা ভক্তি আদায় করতাম, তাহলে তোমার আত্মগ্লানি আসতে পারত ! নিৰুপায় হয়ে অত্যাচার সইতে হলেই কেবল ইনফিরিওরিটি কমপ্লেকস জন্মাতে পারে --জোরালে চরিত্রের প্রভাবে চরিত্রই গড়ে উঠতে পারে । একটু থেমে সুনীল বলে, তুমি যেটা নিজের কমপ্লেক্স ভাবছি, আসলে ওটা তোমার আত্মবিচার। অত অন্যায় অবিচার মেনে নিযে একটা বিশ্ৰী ভাঙ্গন ধরা অবস্থায় আমরা বেঁচে আছি। তুমি ছাত্ৰ-তুমি জানো শিক্ষার নামে কি রকম ফাঁকি চলছে। এ অবস্থাটা মেনে নিতে হচ্ছে বলে নিজেকে ছোট মনে হয়- মনে হয়। এভাবে লেখাপড়া শেখাটাই বুঝি অন্যায় কাজ, অপরাধ। এই থেকেই অবশ্য অনেক ছেলে বিগড়ে যায়-ছটফটানি থেকে রেহাই পাবার জন্য হাল্কা ফুতি খোজে। যারা ভাঙ্গন ধরা অবস্থােটা টিকিয়ে রাখতে চায়, ওরকম ফুতির ব্যবস্থাও তারাই করে দেয় । অনিল চুপ করে থাকে। সুনীল বলে, কল্পনার ব্যাপারটা আমার কি মনে হয় জানো ? বোকাম খানিকটা হচ্ছে প্ৰণবের দিক থেকেই। মেয়েদের সম্বন্ধে একালের ছেলেদের কিছু অভিজ্ঞতা জন্মে যায়-ওর এতটুকু অভিজ্ঞতা নেই। শুধু বই পড়ে সিনেমা দেখে আর বন্ধুদের কাছে শুনে যেটুকু শেখা! ওর ভাবটা তাই খাপছাড়া লাগছে SV)