পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরও বেশী ব্যক্তিগত আক্রোশ জাগবে অঘোরের। অঘোরের কথাবার্তা শুনলেই বুঝতে পারা যায় যে সে খবরের কাগজটা সম্পর্কে দাও মারার ফিকিরে এসেছে। আজ কাজ হাসিল না হলেও কিছু আসে ধায় না। নিজের আপিসের বেতনভোগী কর্মচারী সুনীলের কাছে এভাবে তার নত হয়ে আসার মানেই হল এই যে সে জানে সুনীলের ব্যবসা-বুদ্ধির মধ্যে ছেলেমানুষীর ভেজাল আছে আনুকখানি। নীতির জন্য আদর্শের জন্য সে অনেক কিছু বাস্তব সুবিধা বলি দিয়ে মনে করতে পারে যে খুব লাভ করলাম, জিতে গেলাম । ছেলেমানুষ আদর্শবাদীদের ঘাড় ভাঙ্গাবার জন্য অনেক পাকা পাকা লোক যে চারিদিকে ওৎ পেতে থাকে, তাও অঘোরের অজানা নেই। এইটাই তার আসল ভয় সুনীল সম্পর্কে । তার আপিসে চাকরী না করুক, দেনাপাওনার সম্পর্ক তাদের মধ্যে স্থগিত হয়ে গিয়ে থাক, একটা ঘনিষ্টতা তো সুনীলের সঙ্গে তার সৃষ্টি হয়ে আছে। অনেক কাল ধরে অনেক ধৈৰ্য্য। আর ক্ষমা দিয়ে তাকেই তো গড়ে তুলতে হয়েছে এই ঘনিষ্টতার সুস্পর্ক। আজ তাকে ডিঙ্গিয়ে যদি অন্য কেউ সুনীলের আদর্শবাদিতার সুযোগ নিয়ে তাকে বাগিয়ে বসে, নিজেকে অঘোর কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে না । সুনীল কান্ত হবেই। শেষ পৰ্য্যন্ত ভেস্তে যাবেই তার আদর্শবাদিতার এই চরম প্রচেষ্টা। কাগজটা তার বাগিয়ে নেবেই কোন একজন পয়সাওলা বাস্তববাদী ব্যবসায়ী মানুষ । একটু নত হয়ে নিজেই সুনীলের আপিসে এসে তার সঙ্গে আগেকার গড়ে তোলা আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে কাগজটা বাগাবার পথ সাফ করে রাখলে দোষটা কি ? জুনীল নিজেই তো জানে না কি ভাবে কোন ফাঁদে সে ধরা দেবে। কোন মুখোস পরে কে আসবে তার কাছে, কি ভাবে তার বিশ্বাস জন্মাবে যে ইনি একজন খাঁটি মানুষ, নিরুপায় হয়ে অগত্যা এর কাছে আত্মসমৰ্পন করাই ভালো। (ta