পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারে না। সুনীল । তারপর সচেতন হয়ে টের পায় খোলা জানালায় বাইরে দাড়িয়ে কল্পনা মৃত্যুস্বরে ডাকছে, দাদা ! সুনীল দরজা খোলে। বলে, কি হল ? কল্পনা বলে, কেন মিছে ভাবিছ ? অপমান করেছ বেশ করেছি। তুমি তো ডেকে আনোনি, ও যেচে-যেচে আসে কেন তোমার কাছে ? তার ইচ্ছা অগ্রাহ করে কেঁদো-কেটে ভূপেশের কাছে বাড়তি টাকা নিয়ে কল্পনা নিজের পছন্দসই কাপড়খানা কিনেছিল। রোজ যে দাদা রাত দশটা না বাজতে আলো নিবিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, সেই দাদা আজ আলো নিবিয়ে শুতে পারছে না। দেখে সেই কল্পনাই মরিয়া হয়ে উঠে এসেছে দাদাকে একটু স্নেহ জানাতে । হয়তো বা স্নেহ জানিয়ে ঘুম পাড়াবার আশা নিয়েও ! সুনীল তাকে স্নেহ জানাবার সুযোগ দেয় না, সে জানিয়ে দেয় তার অনিদ্রার কারণ রেবা সংক্রান্ত ঘটনা নয়, সংসারের চিন্তা । -আমি খরচের হিসেব করছিলাম। খরচ বেড়ে যাচ্ছে । সামনের অভ্ৰাণে তোর যে বিয়ে দেব, টাকার ব্যবস্থা কি হবে? কল্পনা স্তব্ধ হয়ে থাকে। মুখ কালো করে থাকে। -খরচ তোরা কমাতে দিবি না। আর বোধ হয় কমানোও যায় না খরচ । তাহলে অন্যভাবে বস্তিতে গিয়ে বঁাচার ব্যবস্থা করতে হয়। তার চেয়ে আমি ভাবছি কাল থেকে সকালে একটা টিউসনি করব। দুটো অফার পেয়েছি, কোনটা নেব ভাবছিলাম । কল্পনার মুখ একটু হা হয়ে গেছে দেখা যায়। সুনীল হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে, আমার শরীরটা খারাপ হয়েছে নাকি রে ? ঠিক মত খাচ্ছি। তো ? কল্পনা হঠাৎ যেন তার কথার জবাবেই কেঁদে ফেলে। কিন্তু এ তো তারও জানা কথাই যে সুনীলের কাছে এসব কান্নার মানে আছে, কিন্তু বিশেষ কোন দাম নেই । R