পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তার দিকে ফিরে না তাকিয়ে সুনীলকে এমন আনন্দের সঙ্গে ভুল খুজে পাবার খবরটা জানানো। এই শরত কী তৈাষামোদটাই করত রতনবাবুকে যার চেয়ার টেবিলে সে আজ বসেছে ! ওর কি খেয়াল নেই যে এখানে যে বসে তার মধ্যে রতনবাবুর ক্ষমতা বতায় ? রতনবাবুর ফাইলপত্র সে নাড়াচাড়া করে দেখতে পারে। চাবি লাগানো ড্রয়ার খুলে দেখতে পারে কি কি মূল্যবান দলিল আর চিঠিপত্র সেখানে আছে। কিন্তু রমেশের কেমন যেন বিতৃষ্ণ বোধ হয় । মোটে তিনদিন আগে মানুষটা মরেছে। সে পৰ্য্যন্ত তার দখল করা চেয়ারে বসতেই কেমন আম্বন্তি বোধ হচ্ছে এখন। পদোন্নতির উল্লাস আর গর্ববোধে এতক্ষণ এটা যেন চাপা ছিল- তার অতি মৃদু। প্রথম হুকুমটি অগ্ৰাহ করে সকলে কাজ নিয়ে ব্যাপৃত হয়ে পড়ার পর এখন কেবলি তার সরু সরু পা-ওলা প্যাণ্ট আর গলা পৰ্য্যন্ত বোতাম আঁটা কোট পরা টাক, পাকা চুল, বাঁধানো দাঁত সমেত ফস মােটা বুড়ো মানুষটাকে কেবলি মনে পড়ছে। এখনও শ্ৰাদ্ধ শান্তি হয় নি মানুষটার। ফাইল খুললেই তো চােখে পড়বে তার পরিচিত সই ! ড্রয়ার খুলে তার নিম্ভের শিশি কিম্বা পানের ডিবাটা চোখে পড়বে না। তাই বা কে বলতে পারে। কেমন একটা জ্বালা বোধ করে রমেশ । অঘোরবাবুই চাকরী করে দিয়েছে সুনীলকে। অঘোরবাবুই তাকে বসিয়েছে রতনবাবুর আসনে । ওরা কিন্তু সমীহ করে সুনীলকে । ঘরে যেন সে উপস্থিত নেই এমনিভাবে তার দিকে একবার না তাকিয়েই নিজের মনে অথবা পরস্পরে জিজ্ঞাসা ও পরামর্শ করে কাজ চলেছে। রমেশ যেন মরিয়া হয়ে হঠাৎ একটা সিগারেট ধরিয়া বসে। এই আপিসে এই ঘরে চাকরী করতে করতে তার এই প্ৰথম সিগারেট ধরনে | V6