পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কল্পনা আর আল্পনা এক ঘরে পড়তে বসলে শুধু বকবক আর ঝগড়া করে পরস্পরের সঙ্গে-লেখাপড়া হয় না । অনিল আর কল্পনা এক ঘরে পড়তে বসলে কল্পনা বার বার তাকে পড়ার মানে জিজ্ঞাসা করে, অনিল চটে গিয়ে তাকে ধমকায়। দু’জনের মধ্যে প্ৰায় কথা বলাবলি বন্ধ হয়ে যায় দু’একদিনের জন্য ! পুলিন একটু হবাগোবা। সে দাদা দিদিদের যেমন রকম সকাম, তেমনিভাবে চলে। চারটে দাদাদিদি হোক আর একটাই হোক-পড়তে বসে তারা মন দিয়ে পড়লে সেও পড়ে, তার হাসােহাসি গল্পগুজব করলে সে চুপচাপ শোনে, ঝগড়াঝাটি করলে সেও আবোলতাবোল চোঁচামেচি করে। জটিল সমস্যা ! এ সমস্যা সমাধানের জন্যই সন্ধ্যায় লেখাপড়া কে তার ঘরে কে বৈঠকখানায় আর কে ভূপেশের ঘরে করবে। সুনীল নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল। সকালে এতদিন সবাই পড়ত বৈঠকখানায়। সুনীল নিজের ঘরে বসে তার নতুন প্ৰবন্ধটা লিখতে লিখতে শুনতে পেত বৈঠকখানা থেকে কলেজ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যেন পাঠশালার স্বরে আ স্বরে আ পডর আওয়াজ তুলে পাঠাভ্যাস করছে। সকালে টিউসনি নেবার পর সে পড়ুয়া ভাইবোনদের হিসাব করে বৈঠকখানা আর নিজের ঘরে লেখাপড় করার জন্য ভাগ করে দিয়েছে। বাজে শিক্ষা। অর্থহীন ফাকিবাজী। শিক্ষা। তবু শিক্ষা দিতেই হবে! পাশ ফেলের দাণ্ডায় মাপতেই হবে ওদের বেশীর ভাগকে ফেলের ডাণ্ডার ঘায়ে কাত করে । পুলিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ছেলেটা অস্বাভাবিকরকম দুরন্ত। চেষ্টা করেও তাকে জাগিয়ে খাওয়ানো যায় নি। রাত্রের রুটি তারকারী । দুধ খাবি ?-বললে হয়তো তাকে একেবারে জাগানো যেত না, কিন্তু ঘুম জড়িত স্বরে সে নিশ্চয় বলত, দাও। ৩৯