পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চলতেই হবে। একটা শ্রেণী উপরে চেপে আছে, আরেকটা শ্রেণী উঠছে, আসল সংগ্রাম এই দুটো শ্রেণীর মধ্যে। যেখানে যেমন রূপ হোক সংঘাতের, স্পষ্ট হোক, আড়াল করা হোক, সব সংঘাতের পিছনে এই দুই শ্রেণীর নেতৃত্ব । চাষীতে জমিদারে যেখানে মারামারি ? জমিদার মালিক শ্রেণীর ঘাটি । চাষী যখন জমিদারের সঙ্গে লড়ে আসলে সে তখন শ্রেমিক শ্রেণীর পক্ষ নিয়ে মালিক শ্রেণীর সঙ্গে লড়ছে। নন্দ একটু বিস্ময়ের সঙ্গেই বলতে যায়, আপনি তো রাজনীতির ধার ধারেন না--- সে কি ? এতক্ষণ তাহলে কি বোঝালাম আপনাকে ? রাজনীতির ধার প্ৰত্যেককে ধারতেই হবে । রাজনীতি মানেই তাই । নন্দ একটু বিরক্ত হয়ে বলে, আহা, আমি বলছি সোজাসুজি রাজনীতি করার কথা । তাতে আপনি করেন না ? আপনি আছেন চাকরী আর দেশ বিদেশের সাহিত্যচর্চা নিয়ে। এসব রাজনীতির কথা জানালেন কি করে p সুনীল হাসিমুখেই বলে, এসব আজকাল সব কিছুর অ, আ, ক, খ, হয়ে গেছে। সাহিত্যচর্চা বিজ্ঞানচর্চা সঙ্গীতচর্চা যাই চর্চা করুন, একটু সাধারণ জ্ঞান জন্মে যাবেই। আমার তো জন্মে নি ? আপনাকে চেষ্টা করে উন্টে জ্ঞানটা শেখানো হয়েছে বলে। এটাই কিন্তু প্ৰমাণ যে শ্রেণী:যুদ্ধের মোট কথাটা সাধারণ জ্ঞান দাড়িয়ে গেছে। আপনি পাছে এ জ্ঞানটুকু পেয়ে যান। সেজন্য আপনাকে বিভ্ৰান্ত করতে রাজনীতির ছোয়াচ বঁাচান যায়, নিরপেক্ষ থাকা যায়। এসব আপনাকে শেখাতে হয় । ঘড়ি ধরে বিদায় নেবার জন্য সুনীল উঠে দাঁড়ালে নন্দ তাকে আরেকটা মনের কথা জানিয়ে বসে । বলে, আমি এমন তাড়াহুড়ো করে ইংরাজী শিখছি কেন জানেন ? আসল কথাটা বলি আপনাকে। কাগজটা ভাল চলছে না, বাবা মাঝে মাঝে তুলে দেবার কথা বলেন। কে জানে, কিছুদিন পরে বাবা হয় তো একেবারে বেঁকে বসবেন, V8