পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মায়া আশ্চৰ্য্য হয়ে বলে, আমাদের রহস্য ? কল্পনা বলে, রহস্য বৈকি ! তাইতে বলি তোমরা দু’জনে মিলেমিশে ঘর কন্না করছ, শুধু লীলাখেলাটুকু বাদ দিয়ে ! আচ্ছা, মায়াদি-মায়াদি তো নয়, বৌদিতোমাদের আইন মতে বিয়ে হয়েছে না তোমরা ওটা একদম বাদ দিয়েছ ? তোদের মত বিয়ের জন্য পাগল নাই আমরা। প্রেমের জন্য পাগল তো। তাই তো বলি, দাদার বুকটা বিয়ে না করেই এমন পাথর হল কিসে? অন্য সংসারে আগে সংসারে বৌ আসে তারপর ভাই দাপট চালায় বাপ মা ভাই বোনদের ওপর। কে জানত দাদা আমাদের বৌ না এনেই সংসারী। মায়া বলে, বিয়ের পর যেন মাথাটা বিগড়ে গেছে মনে হচ্ছে তোর ? আমি অন্য বিষয়ে পরামর্শ করতে এসেছিলাম। কল্পনা নিৰ্ভয়ে বলে, আমি সব শুনেছি। ছোড়দার সঙ্গে ছায়ার বিয়ে তো তোমরা বাতিল করবেই, নইলে যে তোমাদের বেলা অসুবিধা হয়। মায়া এবার রাগ করে বলে, আর্বেল তাবোল কি বলছি তুমি কল্পনা ? আমাদের তো অসুবিধা হবেই। যে দিনকাল, অনিল রোজগার না করলে, ঠিক পথে চলে মানুষ হবে কিনা না জানলে আমিই বা ওর হাতে কি করে বোনকে দেব ? একটু থেমে শান্ত গলায় মায়া আবার বলে, সুনীলবাবু ঠিক কথাই বলেছেন, এরকম হাল্কা প্ৰকৃতির ছ্যাবলা ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়াটাই মন্ত ভুল হবে। আমাদের জিজ্ঞাসা করে কি ওরা বিগড়ে গিয়েছে ? গোল্লায় গিয়েছে নিজেরাই। মানুষ যদি হয়, নিজেরাই চেষ্টা করে ব্যবস্থা করুক-তখন আমাদের যতটা করা দরকার করব । আমরা ওদের ছেলেমানুষিকে প্রশ্ৰয় দিলে ওদের দুজনেরি সর্বনাশ করা হবে । কল্পনা বলে, তোমাদের দুজনেরি সত্যি কঠিন প্ৰাণ মায়াদি ।