বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

ক্ষুদ্র সঙ্ঘারামে স্থবিরগণের দেহাবসানের পর নূতন ভিক্ষুর অভাব ঘটিতে লাগিল ও ধীরে ধীরে সঙ্ঘারামবাসিদিগের সংখ্যার হ্রাস হইতে লাগিল। যে কয়েকজন অবশিষ্ট ছিলেন তাঁহাদেরই মুখে শুনিতাম যে, পাটলিপুত্রে নূতন সাম্রাজ্যের বীজ উপ্ত হইয়াছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় নূতন রাজবংশ স্পষ্টভাবে সদ্ধর্ম্মের বিরোধী না হইলেও তৎপ্রতি বিশেষ অনুরাগী নহেন।

 প্রথম চন্দ্রগুপ্তের সহিত লিচ্ছবিকন্যা কুমারদেবীর পরিণয় সম্পন্ন হইবার পর হইতেই নূতন রাজ্যের আকার বৃদ্ধি পাইতে লাগিল; একে একে ক্ষুদ্র শকরাজ্যগুলি নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যভুক্ত হইয়া গেল; পশ্চিমসাগরতীরে সৌরাষ্ট্রমাত্র আর্য্যাবর্ত্তে সদ্ধর্ম্মের একমাত্র আশ্রয় স্থল হইয়া রহিল। ক্রমে তীর্থর্যাত্রিগণেরও সংখ্যার অত্যন্ত হ্রাস হইল। পাটলিপুত্রে লিচ্ছবি-দৌহিত্র সমুদ্রগুপ্ত যখন আসমুদ্র-ক্ষিতিজয়ের পর অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিতেছিলেন, তখন আর্য্যাবর্ত্তে সদ্ধর্ম্মের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়; যে কয়েকজন ভিক্ষু ভিক্ষোপজীবিকা অবলম্বন করিয়া বনমধ্যস্থ সঙ্ঘারামে বাস করিতেছিলেন, তাঁহাদিগের এক মুষ্টি অন্নের সংস্থানও অসম্ভব-প্রায় হইয়া উঠিল। সমুদ্রগুপ্তের পর চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসনে আরোহণ করিয়াই আনর্ত্তে ও সৌরাষ্ট্রে শকাধিকার লোপ করিলেন, ভারতে শকাধিকারের শেষচিহ্ন পর্য্যন্ত বিলুপ্ত হইল, কামরূপ হইতে সিন্ধুতীর পর্য্যন্ত সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত তাঁহার পদানত হইল এবং দক্ষিণে নীলগিরি পর্য্যন্ত দক্ষিণাপথবাসী রাজগণ তাঁহার চক্রবর্ত্তিত্ব স্বীকার করিলেন। মৌর্য্য সাম্রাজ্যের ধ্বংসের পর উত্তরাপথে এরূপ বিশাল সাম্রাজ্য আর দেখা যায় নাই। কিন্তু গুপ্ত সম্রাটগণের অধীনে তথাগতের ধর্ম্ম দিন দিন ক্ষীণতর হইতেছিল।

৯২