মনুষ্যের সাধ্যাতীত। উল্লাসে কৃতান্তসদৃশ হূণ অশ্বারোহিগণ চীৎকার করিতে লাগিল ও বৃত্তাকারে পাষাণবেষ্টনীর চতুর্দ্দিক বেষ্টন করিল। তাহারা জীবিত অবস্থায় একজনকেও বেষ্টনী হইতে বহির্গত হইতে দিবে না। সিংহের ন্যায় গর্জ্জন করিয়া পূর্ব্বোক্ত বর্ম্মাবৃত যুবক তোরণ পথে অগ্রসর হইলেন। জনৈক হূণ পদাতিক তাঁহারা শিরস্ত্রণের প্রতি লক্ষ্য করিয়া পরশু নিক্ষেপ করিল। ফলে শিরস্ত্রাণের ঊর্দ্ধদেশ ভূমিতে পতিত হইল, সঙ্গে সঙ্গে সহস্রকণ্ঠে সমস্বরে উল্লাসে স্কন্দগুপ্তের জয়ধ্বনি ধ্বনিত হইল। বাহিরে হূণগণ প্রমাদ গণিল। বহুদিন পরে স্কন্দগুপ্তকে দেখিয়া সৈনিকগণের উৎসাহ দ্বিগুণিত হইল, স্কন্ধগুপ্তের নেতৃত্বে পঞ্চশত সৈনিক অবলীলাক্রমে হূণব্যুহ ভেদ করিয়া অরণ্যমধ্যে প্রবিষ্ট হইল, পঞ্চাশৎসহস্র হূণসৈনিক চিত্রের ন্যায় দণ্ডায়মান হইয়া দেখিল, সেই পঞ্চশতের গতিরোধ তাহাদিগের সাধ্যাতীত। কেহ কেহ অরণ্যমধ্যে তাহাদিগের অনুসন্ধান করিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু সেই পঞ্চাশতের পশ্চাতে যাহারা অরণ্যে প্রবেশ করিয়াছিল তাহাদিগকে আর কেহ দেখিতে পাইল না। অর্দ্ধশতাব্দী পরে জালন্ধরে বা উজ্জয়িনীতে হূণবৃদ্ধগণ বালকগণের নিকট স্কন্দগুপ্তের কোশলযুদ্ধের কাহিনী বলিত ও শিশুদিগকে মন্ত্রমুগ্ধ করিয়া রাখিত। শতবর্ষ পরে আর্য্যাবর্ত্তের মহিলাগণ প্রভাতে হূণরাক্ষসগণের কবল হইতে দেবতা, রমণী ও শস্যক্ষেত্রের ত্রাণকর্ত্তৃস্বরূপ স্কন্দগুপ্তের নাম স্মরণ করিতেন; সুদূর বঙ্গদেশে ধীবর জ্যেষ্ঠগণ মহাবিপত্ত্রাতা স্কন্দগুপ্তের নাম গান করিত ও ভক্তিজনিত অশ্রুজলে তাহাদিগের বক্ষ প্লাবিত হইত।
দহনের অসহ্য যন্ত্রণা যে কখনও অনুভব করে নাই তাহার পক্ষে আমাদিগের বর্ণনাতীত যন্ত্রণা বোধগম্য নহে। আলম্বন, স্তম্ভ ও সূচীর
১০৫