পাষাণের কথা
অভ্যন্তরস্থ স্থান ও তোরণগুলি বৃক্ষকাণ্ডে আচ্ছাদিত হইয়াছিল। তাহাতে অগ্নি প্রযুক্ত হইলে সরস তরুগুলি ধীরে ধীরে শুষ্ক হইতে লাগিল ও অগ্নি একবার প্রজ্বলিত হইয়া উঠিলে তাহার শিখা গগন স্পর্শ করিল। তখন বুঝিলাম, প্রাচীন স্তূপের বিনাশের দিন আসিয়াছে। আর্ত্তিমিদর কর্ত্তৃক স্বহস্তে বহুযত্নে নির্ম্মিত দক্ষিণ তোরণের শীর্ষস্থিত ধর্ম্মচক্র সশব্দে ভূমিতলে পতিত হইল, উত্তর তোরণের অষ্টকোণ স্তম্ভ সশব্দে বিদীর্ণ হইয়া গেল, নানাস্থানে বেষ্টনীর স্তম্ভগুলি ধরাশায়ী হইল, লেলিহান অগ্নিশিখা আকাশ স্পর্শ করিল। ক্রমে বেষ্টনীর পার্শ্ববর্ত্তী বৃক্ষসমূহ প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। বেষ্টনীর চতুষ্পার্শ্ব হইতে বিদীর্ণ পাষাণের আর্ত্তনাদ উত্থিত হইল, উত্তাপ অতি ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিল। বর্ত্তুলাকৃতি স্তূপ কম্পিত হইতে লাগিল, সহস্র সহস্র বজ্রনির্ঘোষের মিলিত ধ্বনির ন্যায় শব্দ পৃথিবী হইতে উত্থিত হইতে লাগিল। ধনভূতির বহুযত্ননির্ম্মিত স্তূপ, মহাস্থবিরের ভিক্ষালব্ধ অর্থে নির্ম্মিত স্তূপ, সিংহদত্তের প্রাণাপেক্ষা প্রিয় তথাগতের শরীর, একত্র সমাহিত হইতে চলিয়াছে। মহাশব্দে গর্ভগৃহ শরীরনিধানের আধারের উপরে পতিত হইল। তদপেক্ষা ভীষণ শব্দে পাষাণনির্ম্মিত অর্দ্ধবর্ত্তুল দ্বিধা হইয়া গেল। গুরুভার পাষাণ পতনের ও বিদারণের শব্দ সর্ব্বগ্রাসী অগ্নির ধ্বংসসূচক শব্দকে ক্ষণেকের জন্য পরাস্ত করিল, ধূলি ও ধূমের স্তম্ভ নীল আকাশ স্পর্শ করিল। যন্ত্রণার লাঘব হইবার পূর্ব্বেই চিন্তা করিতে লাগিলাম, স্তূপ ধ্বংস হইল, কিন্তু সিংহদত্তের বহু আয়াসসঞ্চিত তথাগতের শরীর তক্ষশিলায় প্রেরিত হইল না। শুনিয়াছিলাম তক্ষশিলায় মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষের উপরিস্থিত শ্যামল তৃণক্ষেত্রে বক্রনাশা দরদ মেষপাল মেষচরণ ও বংশীবাদন করে। পঞ্চাশবর্ষ পূর্ব্বে
১০৬