পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

মৃৎপিণ্ডের সন্নিধানে আসিয়া সে সর্ব্বপ্রথমেই আমাকে দেখিতে পাইল; কারণ, আমার মস্তক সর্ব্বাপেক্ষা উচ্চ ছিল। আমার নিকটে আসিয়া বৃদ্ধ যেন যন্ত্রণা হইতে মুক্তি পাইল, সে পাষাণে পৃষ্ঠ সংলগ্ন করিয়া বহুক্ষণ বিশ্রাম করিল। তাহার পর ধীরে ধীরে স্তূপ ও বেষ্টনী পরিক্রমণের পথ প্রভৃতি পরীক্ষা করিয়া দেখিল ও আমার নিকট প্রত্যাগমন করিয়া উপবেশন করিল। সমস্ত দিন বৃদ্ধ ধ্বংসাবশেষ পর্য্যবেক্ষণ করিল। কোন স্থানে স্থানচ্যুত স্তম্ভ অর্দ্ধপ্রোথিত অবস্থায় দৃষ্ট হইতেছে, কোন স্থানে ভগ্ন সূচীর আশ্রয়ে মণ্ডূককুল আশ্রয়লাভ করিয়াছে; ভগ্নশীর্ষ তোরণস্তম্ভের শীর্ষদেশে বিহঙ্গম নীড় রচনা করিয়াছে; যে স্তম্ভগুলি দণ্ডায়মান আছে তাহাদিগের বিকল অঙ্গ অগ্নির প্রচণ্ড উত্তাপ ও দাহিকাশক্তির পরিচয় জ্ঞাপন করিতেছে, সূচীতে ও স্তম্ভে খোদিত চিত্রগুলি হূণের অস্ত্র ও অগ্নির আক্রমণে বীভৎস আকার ধারণ করিয়াছে; আলেখ্যগুলিতে ভগ্নশির বা ছিন্ননাসা মনুষ্যমূর্ত্তি নিচয় স্তূপের ও বেষ্টনীর বর্ত্তমান অবস্থা জ্ঞাপন করিতেছে। অর্দ্ধভগ্ন কোন স্তম্ভদ্বয়ের শীর্ষদেশে বৃক্ষশাখা স্থাপিত করিয়া, ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত পাষাণখণ্ডের সাহায্যে ও বন হইতে কুশ সংগ্রহ করিয়া সন্ধ্যার প্রাক্কালে বৃদ্ধ এক অপূর্ব্ব কুটীর রচনা করিল এবং সূর্য্যালোক বিলুপ্ত হইবার পূর্ব্বে তন্মধ্যে শুষ্ক দর্ভের শয্যা রচনা করিয়া বিশ্রামলাভ করিল। তদবধি বৃদ্ধ আমাদিগের নিত্যসহচর হইল। সে প্রভাতে উঠিয়া প্রাচীন নগরের প্রান্তস্থিত ক্ষুদ্র নদীতে স্নান করিয়া আসিত ও বন্য পুষ্প সংগ্রহ করিয়া মৃৎপিণ্ডের অর্চ্চনা করিত, তাহার পর দিবা দ্বিপ্রহর অবধি আমার ছায়ায় বসিয়া আপন মনে কি বলিত, প্রতিদিন “বিমলাকীর্ত্তি ভট্টারিকানিষ্পাদিতা” এই কথা বলিয়া মৃৎপণ্ডিকে নমস্কার

১১৪