লোকে অধিক দিন ব্যবহার করিতে পারিবে। তিনি জানিতেন যে, নগর পরিত্যাগ করিলে দুর্গমধ্যে জলের অভাব হইবে; কিন্তু তিনি অনুমান করিয়াছিলেন যে, অল্পসংখ্যক সৈন্য কূপোদক পানে জীবনরক্ষা করিয়া বর্ষাগম পর্য্যন্ত জীবিত থাকিতে পারিবে এবং তাঁহার ভরসা ছিল যে, ততদিন কোনও না কোন প্রদেশ হইতে সাহায্য আসিবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পতন সময় সে বৎসর যে গ্রীষ্মাধিক্য হেতু বৈশাখের প্রারম্ভে দুর্গমধ্যে জলাভাব হইবে তাহা তিনি কখনও অনুমান করেন নাই। বৈশাখী পূর্ণিমার দিন প্রভাতে সম্রাট সংবাদ পাইলেন যে, কূপগুলিতে দুই দিনের অধিক সময়ের উপযোগী পানীয় জল নাই। তখন তিনি দুর্গ প্রাকারে আরোহণ করিয়া যমুনা-সঙ্গমের শুষ্ক বালুকারাশির উপর শক্র শিবির পর্য্যবেক্ষণ করিতে লাগিলেন। সেই দিন দ্বিপ্রহরে মন্ত্রণাগৃহে সাম্রাজ্যের প্রধান অমাত্য ও সেনাপতিগণ স্থির করিলেন যে, তৃতীয় দিবসের পর দুর্গরক্ষা সম্ভবপর নহে। অর্দ্ধাহারে বা অনশনে সৈনিকগণ যুদ্ধ করিতে পারে, কিন্তু জলাভাব হইলে অবরুদ্ধ সেনাদলকে শান্ত করা কঠিন। মন্ত্রণায় স্থির হইল, রাত্রিকালে সম্রাট স্বয়ং কালিন্দী হইতে জল সংগ্রহের চেষ্টা করিবেন; কিন্তু যে দিন জল সংগৃহীত না হইবে তাহার পরদিন দুর্গ পরিত্যাগ করিতে হইবে। দুর্গ পরিত্যাগের কথা শুনিয়া বৃদ্ধ সম্রাট ঈষৎ হাস্য করিলেন। যাহারা প্রথম হূণযুদ্ধে স্কন্দগুপ্তকে দেখিয়াছিল তাহারা সে হাস্যের অর্থবোধ করিয়া শিহরিল। রাত্রিকালে চন্দ্রালোকে যমুনাসৈকত উভয় পক্ষীয় সৈন্যের রক্তে রঞ্জিত হইয়াছিল। জলবাহী উষ্ট্রসমূহ কালিন্দীতীর হইতে দুর্গমধ্যে প্রত্যাগমনকালে হূণগণ কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইল, বহু চেষ্টাসত্ত্বেও সম্রাটের সৈনিকগণ উষ্ট্রগুলির উদ্ধার করিতে পারিল না। সম্রাট স্বয়ং যুদ্ধ করিয়াও কিছু করিতে
১১৯