বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

পারিলেন না। হূণগণ তখন দুর্গ ও কালিন্দীতীরের মধ্যভাগে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া যুদ্ধ করিতেছে। সম্রাট কিছুতেই শত্রুদল ভেদ করিতে পারিলেন না। বহুশ্রমে ও অনাহারে ক্লিষ্ট সৈনিকগণ বৃথাযুদ্ধে প্রাণত্যাগ করিতে লাগিল। অবশেষে হতাশ হইয়া বৃদ্ধ সম্রাট দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিলেন। তাঁহার পশ্চাতে স্বয়ং মিহিরকুল দুর্গপ্রবেশের চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু রামগুপ্ত কর্ত্তৃক নির্ম্মিত লৌহদ্বার অনায়াসে তাঁহার গতিরোধ করিল। সম্রাটের সেনাদল নির্ব্বিঘ্নে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিল। বৈশাখী কৃষ্ণ প্রতিপদের প্রত্যূষে বৃদ্ধ সম্রাট দুর্গপ্রাঙ্গণে অবশিষ্ট সেনা সমবেত করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন যে, জলাভাবে দুর্গরক্ষা অসম্ভব, কিন্তু তিনিও প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করিয়া পশ্চাৎপদ হইতে অসন্মত, প্রতিষ্ঠান হস্তচ্যুত হইলে রেবা হইতে জাহ্ণবী পর্য্যন্ত ও জাহ্নবী হইতে হিমবান পর্য্যন্ত সমস্ত ভূখণ্ড হূণগণের করতলগত হইবে, পুণ্যক্ষেত্র বারাণসী লুণ্ঠিত হইবে ও পাটলিপুত্র ব্যতীত সংরক্ষণের দ্বিতীয় স্থান থাকিবে না। বৃদ্ধ কহিলেন, পঞ্চবিংশ বর্ষ পূর্ব্বে আটবিক প্রদেশে বনদুর্গ অবরোধকারী হূণমণ্ডল ভেদ করিয়া পঞ্চশত সৈনিক প্রতিষ্ঠান পর্য্যন্ত আসিতে পারিয়াছিল; সুতরাং পঞ্চ সহস্রের পক্ষে শক্রব্যুহ ভেদ করিয়া চরণাদ্রি দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করা আশ্চর্য্য ব্যাপার নহে। কিন্তু যদি প্রত্যাগমন করিতে হয় তাহা হইলে কালিন্দীর মলিন জলপান করিয়া যাইতে হইবে, নতুবা আর্য্যাবর্ত্তের বিশাল বক্ষে তাহাদিগের আর স্থান হইবে না। সেনাপতি ও সৈন্যগণ নীরবে এ কথা শ্রবণ করিলেন। অবশিষ্ট কূপোদক স্নানে ও পানে ব্যয়িত হইল। সন্ধ্যার প্রাক্কালে দুর্গের সিংহদ্বার উন্মুক্ত হইল, বিস্ময়স্তিমিত নেত্রে হূণগণ দেখিল, উৎসব সজ্জায় সজ্জিত হইয়া মুষ্টিমেয় সৈন্য কালিন্দী-সৈকতে

১২০