পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

আত্মবিসর্জ্জন করিতে চলিয়াছে। ধীরে ধীরে খুম্মান ও মিহিরকুলের অধীনে লক্ষ লক্ষ হূণসৈন্য পঞ্চসহস্রের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য অগ্রসর হইল। হস্তিপৃষ্ঠ হইতে তোরমাণ দেখিলেন, শুভ্রকেশ শুভ্রবসনপরিহিত বৃদ্ধ সম্রাট স্বহস্তে হৈম গরুড়ধ্বজ ধারণ করিয়া শ্বেতাশ্বারোহণে তির্য্যকব্যুহের পুরোদেশে ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতেছেন। হূণসৈন্যের অধিকাংশ দুর্গ মধ্যে প্রবেশ করিয়া লুণ্ঠনে মনোযোগ দিয়াছে, কেহ কেহ শত্রুসৈন্যের সহিত যুদ্ধ করিতেছে। স্কন্দগুপ্তের রণকৌশলের কথা তিনি বহুদিন হইতে শ্রবণ করিয়া আসিতেছিলেন। শত শত হূণ ব্রহ্মাবর্ত্তের প্রথম যুদ্ধের বিবরণ দেশে দেশে প্রচারিত করিয়াছিল। তরুণ হূণরাজ ভাবিলেন, ভয়ে বৃদ্ধের বুদ্ধিভ্রংশ হইয়াছে। সম্মুথে যমুনা, উত্তর পার্শ্বে অপরিমিত শক্রসৈন্য, পশ্চাতে শত্রু হস্তগত ভীষণ দুর্গ, এইরূপ যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পৃথিবীতে কয়জন সৈনিক প্রত্যাগমনের আশা করিয়া থাকে? ধীরে ধীরে হূণসৈন্য মুষ্টিমেয় বিপক্ষদলকে পেষণ করিবার চেষ্টা করিল; কিন্তু দেখিল, সংখ্যায় হীন হইলেও সে তির্য্যক্‌ব্যুহ যেন বজ্র নির্ম্মিত। ব্যুহের পূর্ব্বকোণে স্কন্দগুপ্ত স্বয়ং সৈন্য পরিচালনা করিতেছেন; ক্রমে ক্রমে ব্যুহের পূর্ব্ব কোণ কালিন্দীর দিকে অগ্রসর হইতেছে। মিহিরকুল ভাবিলেন, শত্রু স্বেচ্ছায় কালিনীর জলে আত্মবিসর্জ্জন করিতে যাইতেছে। তখন তিনি হূণসৈন্যের গতি পরিবর্ত্তন করিলেন। নদীতীর পরিত্যাগ করিয়া হূণগণ শত্রুব্যুহের উভয় পার্শ্বে ও দুর্গের সম্মুখে আক্রমণ করিল, ব্যুহ দ্রুতবেগে নদীর জল স্পর্শ করিতে ধাবিত হইল। সর্ব্বাগ্রে রক্তাক্ত অশ্বে রক্তার্দ্রপরিচ্ছদ বৃদ্ধ স্কন্ধগুপ্ত। যমুনাগর্ভে দণ্ডায়মান হইয়া অল্প সংখ্যক সৈন্য হূণগণকে বাধা প্রদান করিতে লাগিল, কিন্তু দ্বিসহস্রের অধিক সৈন্য অবলীলাক্রমে সন্তরণে নদী পার হইয়া গেল। মিহিরকুল

১২১