ছিলেন। বেতসলতায় আচ্ছাদিত হইয়া প্রাচীন স্তূপবেষ্টনীর স্তম্ভ লুক্কায়িত ছিল। সূচীবৎ তীক্ষ্ণ ভগ্ন পাষাণের অগ্রভাগ, উপবেশনকালে, হস্তীর পশ্চাৎদেশে বিদ্ধ হওয়ায় যাতনায় হস্তী উপবেশন করিতে পারে নাই। তিনি শূলের দণ্ডে বেতসলতা অপসৃত করিয়া পাষাণখণ্ড দর্শন করিলেন। বৃদ্ধের মুখমণ্ডল গম্ভীর ভাব ধারণ করিল; তিনি চিত্রাঙ্কিতের স্থায় শূলহস্তে বেতসকুঞ্জমধ্যে দণ্ডায়মান রহিলেন। হর্ষোৎফুল্ল বালক পিতাকে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করিতেছিল; সে আহ্বান তাঁহার কর্ণগোচর হইল না। বালক বিরক্ত হইয়া বৃক্ষতল হইতে বেতসকুঞ্জে দৌড়াইয়া আসিল, পিতার হস্ত ধরিয়া আকর্ষণ করিল, কিন্তু পরক্ষণেই তাঁহার মুখের ভাব দর্শন করিয়া পশ্চাৎপদ হইয়া ধীরে ধীরে বৃক্ষতলে প্রত্যাবর্ত্তন করিল। এই ভাবে দিন অতীত হইল। বালক ব্যাঘ্র লইয়া গৃহে ফিরিবার জন্য ব্যস্ত হইল, গুরুভার বর্ম্মে পীড়িত হইয়া হস্তীও অসুস্থতার চিহ্ন প্রকাশ করিতে লাগিল। ক্রমে আলোকের অভাব অনুভব হইলে বৃদ্ধের চিন্তার অবসান হইল। বেতসকুঞ্জ হইতে অশ্বত্থবৃক্ষতলে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া বৃদ্ধ হস্তিপককে হস্তীর বর্ম্ম মোচন করিতে আদেশ করিলেন ও তাহার পৃষ্ঠের আস্তরণ বৃক্ষতলে বিস্তৃত করিতে কহিলেন। ইহাতে হস্তিপক বিস্মিত হইল, কিন্তু নীরবে আজ্ঞা পালন করিল। বৃক্ষতলে কঠিন আস্তরণে পিতা ও পুত্র উপবেশন করিলেন। হস্তিপক হস্তী লইয়া জলাম্বেষণে গেল। হস্তিপক প্রত্যাবর্ত্তন করিলে সন্ধ্যাকালে সকলে বনমধ্য হইতে শুষ্ক কাষ্ঠ আহরণ করিয়া অশ্বত্থবৃক্ষের চতুষ্পার্শ্বে চারিটি স্তূপ নির্ম্মাণ করিলেন ও কাষ্ঠস্তূপে অগ্নি সংযোগ করিয়া বৃক্ষতলে বিশ্রামের আয়োজন করিতে লাগিলেন। সম্মুখে হস্তী ও চতুষ্পার্শ্বে অগ্নিকর্ত্তৃক রক্ষিত হইয়া মনুষ্যত্রয় রজনী অতিবাহিত করিলেন। নিশাচর মৃগ-
পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৪১
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা
১২৯
[ ঝ