পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

সরল বিশ্বাসের পরিবর্ত্তে বাহ্যাড়ম্বর সার হইল। বহুদিন হইতে বাহ্যাড়ম্বরে ব্রাহ্মণগণ অভ্যস্ত, জনসমাজও ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মে আড়ম্বর দেখিতে অভ্যস্ত। অন্তঃসারশূন্য বাহ্যাড়ম্বরে বৌদ্ধসঙ্ঘ ব্রাহ্মণগণকর্ত্তৃক পরাজিত হইল। বৌদ্ধসঙ্ঘের ধৈর্য্যচ্যুতি হইল ও পদস্খলন আরদ্ধ হইল। অবনতির চরমসীমায় উপস্থিত হইয়া শান্তিময় মহাজিনের শান্তিময় ধর্ম্ম নিরীহ আর্য্যাবর্ত্তবাসিগণের রক্তস্রোতে আর্য্যাবর্ত্ত হইতে তাড়িত হইল। নিরীহ সদ্ধর্ম্মে প্রকৃতবিশ্বাসী জনসমূহের রক্তস্রোতে সদ্ধর্ম্মের নাম দাক্ষিণাত্যের প্রত্যেক উপত্যকা হইতে ধৌত হইল। যাহারা অবশিষ্ট রহিল, ধর্ম্মের গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ রহিয়া, তাহারা অনন্তের শেষ পর্য্যন্ত দুর্জ্জেয় থাকিবে। কিন্তু যাহা কখনও হয় নাই তাহা তখনও হইল না। প্রসার বিহীন ক্ষুদ্র পরিসরে আবদ্ধ প্রাচীন ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মের গিরিদুর্গ জিত হইয়াছে—সংস্কার দূর হইয়াছে,—নাম বর্ত্তমান আছে; সার অপহৃত হইয়াছে, ছায়া এখনও অপসৃত হয় নাই। আমি ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্ত্তমান দেখিতে পাইতেছি; দেখিতেছি, যাহা আছে তাহাও থাকিবে না; কারণ, জগতে অসত্যের স্থান নাই।

 যাহা দেখিয়াছিলাম তাহা পূর্ব্বে কখনও দেখি নাই, তাহার নাম যথেচ্ছাচার ও সুশৃঙ্খলার অভাব। তাহা দেখিলে বোধ হয়, যাহারা এ অবস্থায় উপনীত হইয়াছে তাহারা শীঘ্রই পরিবর্ত্তিত বা বিলুপ্ত হইবে। দশপুর হইতে সেনা আসিয়াছে। তাহাদিগের অধিনায়কবর্গ, অস্ত্রশস্ত্র, অনুচর, পার্শ্বচর প্রভৃতি সমস্তই উপস্থিত; কিন্তু তাহাদিগের মধ্যে সুশাসন বা সুশৃঙ্খলার একান্ত অভাব। সেনা আসিবার পূর্ব্বে বহুসহস্র পটমণ্ডপ আসিয়াছে; কিন্তু শৃঙ্খলার অভাবে শিবির স্থাপনের আদেশ হয় নাই, সুতরাং শিবির স্থাপিত হয় নাই। দিবাবসানে শ্রান্ত সেনাদল

১৩৯