নিশীথে সঙ্ঘারাম হইতে নৃত্য ও গীতের শব্দ উত্থিত হইয়া প্রাচীন পাষাণ সমূহের মনে বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বগণের সিদ্ধি সম্বন্ধে সন্দেহ উৎপাদিত করিত। কখনও কখনও মহাশক্তিগণ বুদ্ধবোধিসত্ত্বাদির আশ্রয় পরিত্যাগ করিয়া সৈনিকগণের আশ্রয় গ্রহণ করিত। তখন শক্তির অধিকারের জন্য সৈনিকে ও ভিক্ষুতে ভীষণ কলহ হইত ও সময়ে সময়ে সঙ্ঘারামবাসী ও শিবিরবাসিগণের মধ্যে ক্ষুদ্র রণাভিনয়ও হইয়া যাইত। সেনাদলের পার্শ্বচারিণীরাও যে সময়ে সময়ে সঙ্ঘারামে আশ্রয় লাভ না করিত তাহাও নহে। সদ্ধর্ম্মের এমনই মহিমা যে, সঙ্ঘারামমধ্যে উপস্থিত হইবামাত্র তাহারাও আচারপরিবর্ত্তন করিয়া মহাশক্তিরূপ ধারণ করিত।
এইরূপে বহুকাল অতিবাহিত হইল, স্তূপ ও বর্ত্মসংস্কার, এবং মন্দিরাদিনির্ম্মাণকার্য্য শেষ হইলে শুনিলাম, সম্রাট তীর্থদর্শনে আসিবেন ও তাঁহার সহিত নানা দিগ্দেশ হইতে বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব ও স্থবিরগণ আগমন করিবেন। তাঁহাদিগের বাসস্থানসমূহ নির্ম্মিত হইতে লাগিল। এক দিন বহু দূর হইতে বহু যানবাহন নুতন বুদ্ধ, নূতন বোধিসত্ত্ব ও শক্তিরূপিণী শত শত নারী বহন করিয়া স্তূপসন্নিধানে উপস্থিত হইল। ক্রমে স্তূপের চতুষ্পার্শ্বে ক্ষুদ্র নগর স্থাপিত হইল, শত শত বিপণীতে নগরোপকণ্ঠ আচ্ছাদিত হইয়া গেল। প্রতি রজনীতে সদ্ধর্ম্মানুযায়ী সাধনার আনন্দধ্বনি বহুদূর হইতে শ্রুত হইত; কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, কখনও কোনও গৃহস্থ নাগরিক স্ত্রীপুত্ত্রাদি সমভিব্যাহারে তীর্থদর্শনে আসিত না। একদিন সম্রাট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার সহিত বহুসংখ্যক সৈন্য আসিল, বহুকাল পরে চীরধারী কয়েকজন ভিক্ষু সম্রাটের পার্শ্বচররূপে স্তূপসন্নিধানে উপস্থিত হইলেন। সম্রাটের সহিত যে সমস্ত সেনা আসিয়াছিল তাহারা হূণযুদ্ধে সুশিক্ষিত, সুতরাং তাহাদিগের মধ্যে নিয়ম বা শৃঙ্খলার বিশেষ
১৪১