পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

মহাসমারোহে আমার অর্চ্চনা করিত। কিন্তু যিনি মানবজাতির হিতসুখার্থ রাজ্যসম্পদ ও সংসারসুখ পরিত্যাগ করিয়া উত্তরাপথবাসিগণের দ্বারে দ্বারে নগ্নপদে সুসংবাদ বিতরণ করিয়াছিলেন তাঁহার দেহাবশেষ অদূরে শিলাস্তূপের মধ্যে সমাহিত ছিল; তাহার প্রতি কেহ ফিরিয়াও চাহিত না। ইহাই মানব প্রকৃতি।

 উত্তরাপথের লক্ষ লক্ষ সেনা আটবিক কোশলে প্রবেশ করিল। চিরস্বাধীন বর্ব্বরগণ বুঝিয়াছিল যে, ইহা দেবযাত্রা বা তীর্থযাত্রা নহে, হর্ষবর্দ্ধনের দক্ষিণাপথবিজয়যাত্রা। গ্রামে গ্রামে নগরে নগরে নগ্নপদে বিচরণ করিয়া সন্ন্যাসিগণ উদ্ধতস্বভাব বর্ব্বর মাণ্ডলিকগণকে শান্ত করিয়া রাখিয়াছিলেন। মঠাধ্যক্ষের কথা সত্য হইল, এক বিন্দু রক্ত ব্যয় না করিয়াও বিশাল সমৃদ্ধিশালী প্রদেশ হর্ষবদ্ধনের সাম্রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল। সম্রাট যাঁহাকে দুত স্বরূপ কোশলে প্রেরণ করিয়াছিলেন তিনি রাজসকাশে উচ্চপদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। কোশল বিজিত হইল; দক্ষিণাপথের দ্বার অধিকৃত হইল। সংবাদ বিদ্যুৎ গতিতে কোশল হইতে বিদিশা, বিদিশা হইতে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান হইতে বাতাপিনগরে উপস্থিত হইল। চালুক্য-রাজ বিপদ বুঝিয়া আত্মরক্ষায় প্রবৃত্ত হইলেন। নর্ম্মদাতীরে বৃহৎ সেনানিবাস স্থাপিত হইল। আর্য্যাবর্ত্ত হইতে দলে দলে অশ্বারোহী ও পদাতিক সেনা আটবিক কোশলের নানাস্থানে স্কন্ধাবার স্থাপন করিতেছিল। সৈন্যগণ কর্তৃক উৎপীড়িত হইয়া বর্ব্বর গ্রামবাসী ও মাণ্ডলিকগণ সময়ে সময়ে উত্তেজিত হইয়া উঠিত, কিন্তু সন্ন্যাসিগণের ঐকান্তিক চেষ্টায় কোন স্থানেই বিবাদবহ্নি প্রজ্জ্বলিত হইতে পারে নাই। ধীরে ধীরে নর্ম্মদাতীরে নানাস্থানে সৈন্য সমাবিষ্ট হইল, তখন সম্রাট স্বয়ং কান্যকুব্জ পরিত্যাগ করিয়া কোশলে প্রবেশ করিলেন। দুর্গপ্রাকারস্বরূপ

১৫৪