বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাষাণের কথা

মন্দিরের ভগ্নাবশেষ দর্শন করিতে আসিত, তখন বিশাল পাষাণ স্তূপের বিশালতা দেখিয়া তাহার পূর্ব্বগৌরব স্মরণ করিয়া আত্মহারা হইয়া কত কথাই বলিত। এইরূপে যুগের পর যুগ কাটিয়া গেল।

 ক্রমে শুনিলাম অরণ্যান্তর হইতে নূতন বর্ব্বরজাতি আমাদিগের চতুষ্পার্শস্থিত অরণ্যে আসিয়া বাস করিয়াছে। তাহাদিগকে দেখিয়া বোধ হয় না যে তাহারা কখনও সভ্যতার সংস্পর্শে আসিয়াছে। শুনিতাম তাহারা আসিবার পরে পর্ব্বতবাসিগণ আর সদা সর্ব্বদা অরণ্যপথ অতিবাহন করিয়া মন্দিরের ভগ্নাবশেষ অর্চ্চনা করিতে বসিতে সাহসী হইত না। কিন্তু সময়ে সময়ে তাহারা আসিত। তাহাদিগের গ্রামবৃদ্ধগণের মনে তখনও বদ্ধমূল সংস্কার ছিল যে, বিশেষ বিশেষ তিথিতে পাষাণ স্তূপের অর্চ্চনা করা অত্যন্ত আবশ্যক, পূর্ব্বপুরুষগণের আখ্যায়িকা শ্রবণে তাহারা জানিয়া রাখিয়াছিল যে, এই সকল তিথিতে মঠবাসিগণ সমারোহে মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবতার অর্চ্চনা করিতেন। এই সকল তিথিতে পর্ব্বতবাসী প্রাচীন বর্ব্বরজাতি সশস্ত্র হইয়া মন্দিরের ভগ্ন স্তূপ অর্চ্চনা করিতে আসিত। নূতন বর্ব্বরজাতি বনমধ্যে বৃক্ষকাণ্ডের অন্তরালে আত্মগোপন করিয়া তাহাদিগের পূজার্চ্চনার বিধি লক্ষ্য করিয়া দেখিত। কিছুকাল দেখিতে দেখিতে তাহাদিগের মনেও বদ্ধমূল সংস্কার হইয়া গেল যে, এই পাষাণ স্তূপে নিশ্চয়ই কিছু বিশেষত্ব আছে, ইহার কোন স্থানে কোনও নিভৃত কোণে নিশ্চয়ই শিষ্ট বা দুষ্ট দেবত লুক্কায়িত আছে। এই বন নিশ্চয়ই সেই দেবতার রাজ্য, নতুবা সূদুর বনপ্রান্তে অবস্থিত পর্ব্বতমালার অধিবাসিগণ কি কারণে এই বিপদসঙ্কুল অরণ্যপথ অতিবাহিত করিয়া এই ভগ্ন পাষাণখণ্ডসমূহের অর্চ্চনা করিতে আসিয়া থাকে?

১৬৩