পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাষাণের কথা

উপদেশানুসারে ধরিত্রীকে পুষ্পাঞ্জলি নিক্ষেপে পূজা করিলেন। রাজবংশধর নিক্ষিপ্ত সেই পুষ্পমুষ্টির উপরে সমবেত জনসাধারণ ক্রমাগত পুষ্পবৃষ্টি করিয়া একটি ক্ষুদ্র স্তূপের সৃষ্টি করিল। বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজক তখন উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন যে, তথাগতের বাক্যানুসারে সমুদায় স্তূপ ও গর্ভচৈত্যই অর্দ্ধবৃত্তাকার ও তৎসমুদায়ের উচ্চতা নৈমদৈর্ঘ্যের সমান। তখন ধর্ম্মযাজকেরা পুষ্প লইয়া সেই কুসুমস্তূপের পার্শ্বে পত্র ও পুষ্পদ্বারা গোলাকার বেষ্টনী নির্দ্দেশ করিলেন এবং পুষ্প, চন্দন ও জলদ্বারা স্তূপের অর্চ্চনা করিলেন। ইহার পর রাজা ধর্ম্মযাজকগণ পরিবৃত হইয়া সপ্তবার স্তূপ প্রদক্ষিণ করিলেন। ক্রমে সূর্য্যতাপতাড়িত হইয়া জনসমূহ নগরাভিমুখে চালিত হইল। সেই দিন সন্ধ্যাকালে, অন্ধকারাগমের অব্যবহিত পূর্ব্বে, ভীতচকিত পাদক্ষেপে দুইজন লোক আমাদের সমীপে আসিল। তাহারা বিদেশীয় নহে, ভারতীয় বটে; কিন্তু যেন বন্য জন্তুর ন্যায় অন্ধকারের আশ্রয়ে ভ্রমণ করে। তাহারা যেন মানবজাতির অধিকারচ্যুত হইয়া নিশাচরে পরিণত হইয়াছে। তাহারা ব্রাহ্মণজাতীয়, ঈর্ষ্যায় তাহাদিগের কলেবর কম্পবান, রোষে তাহাদের নেত্র রক্তবর্ণ; আমাদিগকে দেখিয়া তাহারা যেন আর আত্মসম্বরণ করিতে পারিতেছিল না। তাহারা মুখের ভাবে ও কথোপকথনে প্রকাশ করিতে লাগিল যে, তাহাদিগের আশা-ভরসা, সুখ-সম্পদ সকলই দূর হইয়া গিয়াছে। সুদিন প্রত্যাবর্ত্তনের যে আশা ছিল তাহাও যেন এই প্রস্তররাশির আগমনে একেবারে লুপ্ত হইয়াছে। অসহায় প্রস্তররাশির উপর নিষ্ঠীবন ত্যাগ করিয়া ও পদাঘাত করিয়া তাহাদিগের মনুষ্যপদলোপের পরিচয় দিতে লাগিল। তাহাদিগের কথোপকথনে জানিলাম যে, বহুপূর্ব্বে সে দেশে ব্রাহ্মণেয় প্রভাব অক্ষুণ্ণ ছিল। প্রিয়দর্শীর রাজত্বকালে ব্রাহ্মণের প্রথম মর্য্যাদাহানি

২৩