পাষাণের কথা
হয়, তাহার পর ব্রাহ্মণগণ আর কখনই পূর্ব্বগৌরবলাভে সমর্থ হয়েন নাই। তবে পুষ্যমিত্রের রাজত্বলাভের পর হইতে বৌদ্ধপ্রভাবের হ্রাস হইয়াছিল। কিন্তু সে অত্যল্প কালের জন্য। পাটলিপুত্রবাসী বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজকের আগমনকাল হইতে ব্রাহ্মণগৌরব পুনরায় তিরোহিত হইয়াছে। তাহারা যতবার সেই বর্ষীয়ান যাজকের নাম গ্রহণ করিল, ততবারই ভূমিতে নিষ্ঠীবন ত্যাগ করিল, তাহারা যেন আর কোন প্রকারে সম্যক্ ঘৃণা প্রকাশ করিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। কিয়ৎকাল পরে দূরে নগররক্ষিগণের পদশব্দ শ্রবণে তাহারা অন্ধকারে মিলাইয়া গেল।
পরদিন প্রভাতে যবনচতুষ্টয় অসংখ্য শ্রমজীবী সমভিব্যাহারে প্রান্তরে আসিয়া উপস্থিত হইল। শ্রমজীবিগণ তিন ভাগে বিভক্ত হইয়া কার্য্যে প্রবৃত্ত হইল। একভাগ প্রস্তর সমূহ আচ্ছাদনের নিমিত্ত পর্ণকুটীর নির্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইল; অপর ভাগ ভূমিতে গর্ত্ত খনন আরম্ভ করিল ও তৃতীয় ভাগ সঞ্চিত শিলাখণ্ড সমূহ আকারানুসারে শ্রেণীবিভাগ করিতে লাগিল। সেই দিন অপরাহ্ণে একজন যবন মসৃণ চর্ম্মখণ্ড, মসী ও লেখনী লইয়া চিত্রাঙ্কনে প্রবৃত্ত হইল। যথাসময়ে চিত্রাবলী প্রস্তুত হইলে স্থবির ধর্ম্মযাজক আসিয়া তাহা পর্য্যবেক্ষণ করিতে লাগিলেন। যবনগণ কোশলের ও উদ্যানের ভাষা মিশ্রিত করিয়া আপনাদের বক্তব্য তাহাকে বুঝাইতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। যথাসময়ে অঙ্কিত চিত্র রাজার অনুমোদিত হইল। তখন বুঝিতে পারি নাই যে, আমাদেরই খণ্ডিত দেহসমূহ শতধা বিভক্ত হইয়া, সহস্র সুতীক্ষ্ণ অস্ত্রাঘাত সহ্য করিয়া যেরূপ শ্রেণীবিন্যাসে ন্যস্ত হইবে এই চিত্রাবলী তাহারই। যথাসময়ে পর্ণশালা নির্ম্মিত হইল, আমাদের উৎপীড়ন আরব্ধ হইল। পাষাণদেহে যদি শোণিত থাকিত তাহা হইলে আমাদিগের শোণিত-প্রবাহে কোশল হইতে চোলমণ্ডল পর্য্যন্ত
২৪