যবন শিল্পিগণ, বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজক ও রাজা বেষ্টনীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। বেষ্টনীর অন্তরালে কি হইল, তাহা বলিবার বোধ হয় আবশ্যকতা নাই। বিস্ময়বিস্ফারিত নেত্রে রাজা দেখিলেন, চারিদিকে চারিটি তোরণ প্রায় আকাশ স্পর্শ করিয়াছে; প্রতি তোরণগাত্রে তাঁহার নাম ও বংশপরিচয় খোদিত আছে; প্রতি স্তম্ভে নাগ, যক্ষ ও কিন্নর প্রভৃতি উপদেবতাগণের মূর্ত্তি; সূচিতে জাতক বা অপর কোন চিত্র। তাঁহার সে সময়ে বিশেষ বাক্যস্ফূর্ত্তি হয় নাই; তিনি বিস্ময়বিস্ফারিত লোচনে শিল্পকীর্ত্তি দেখিতে লাগিলেন। শিল্পিগণ ও ধর্ম্মযাজক নীরবে তাঁহার অনুগমন করিতে লাগিলেন। প্রায় এক প্রহর কাল রাজা স্তম্ভের পর স্তম্ভ, সূচির পর সূচি, সমুদায় স্তূপ ও বেষ্টনী পর্য্যবেক্ষণ করিলেন। পরে বাহিরে আসিয়া রাজা ধনভূতি ও ধর্ম্মযাজক বহুক্ষণ পরামর্শ করিলেন। ইতিমধ্যে জনসঙ্ঘে কোলাহল বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। সম্মুখ পংক্তির নাগরিকগণ ক্রমশঃ অধীর হইয়া উঠিল। রাজাদেশে রক্ষিগণ জনতা-মধ্যে প্রবেশ করিয়া নগরের কয়েকজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে রাজসমীপে আনয়ন করিল। তখন তাঁহারা সকলে সেই সূচিবৎ তীক্ষ্ণ শিক্ষাসঙ্কুল অনাবৃত ভূমিতে উপবেশন করিয়া ভবিষ্যতের কার্য্যসম্বন্ধে পরামর্শ করিতে লাগিলেন। জনসাধারণ নাগরিকগণকে রাজসমীপে আসিতে দেখিয়া কথঞ্চিৎ শান্ত হইল; তাহারা বোধ হয় ভাবিল যে, রাজা হয়ত তাহাদিগের আশা পূর্ণ করিবার জন্য প্রধান প্রধান নাগরিকগণকে সমীপে আহ্বান করিয়াছেন। কতদিন হইতে তাহারা শুনিয়া আসিতেছে যে, উপাসক ও উপাসিকাগণের পূজার জন্য তথাগতের দেহাবশেষ আনীত হইবে! মথুরাবাসীরা সদ্ধর্ম্মীদিগের জন্য ভস্মাবশেষের এক কণা দিতে স্বীকৃত হইয়াছে। কতদিন হইতে তাহারা শুনিয়া আসিতেছে যে, নগরপ্রান্তে গর্ভচৈত্য নির্ম্মিত হইবে; চৈত্যগর্ভে
পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৪৯
অবয়ব
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাষাণের কথা
৩৭