পাষাণের কথা
শ্রমণ। প্রতি পংক্তিতে পাঁচজন, এইরূপ শতাধিক পংক্তি নির্গত হইল। পরে বাদিকা ও নর্ত্তকীদল পুণ্যসঙ্গীত ও যন্ত্রবাদন করিতে করিতে ভিক্ষুগণের পদানুসরণ করিল। তাহাদিগের পরে বহুমূল্য বেশভূষায় ভূষিত হইয়া নগরের দেবদাসী, গণিকা, লেনাশোভিকাগণ আসিল। ইহার নগরদ্বার হইতে নির্গত হইলে অত্যুচ্চ শ্বেতবর্ণ সপ্তচ্ছত্র পরিলক্ষিত হইল। শ্বেতচ্ছত্র দর্শনে জনতা হইতে বিশাল কলরব উত্থিত হইল, কোষ্ঠপালগণের রজ্জুবন্ধন উল্লঙ্ঘন করিয়া জনসঙ্ঘ নগরাভিমুখে প্রতিগমনের চেষ্টা করিতে লাগিল। বহু চেষ্টায় যাত্রার পথ অবাধ রহিল, কিন্তু সে কলরব আর মধ্যাহ্নের আগে প্রশমিত হইল না। শ্বেতচ্ছত্র ক্রমে নিকটে আসিলে দৃষ্ট হইল যে, উহার নিম্নে সুবর্ণদণ্ডযুক্ত মুক্তা ও হীরকখচিত চন্দ্রাতপ। রাজা ধনভূতি ও তাঁহার মহিষীগণ নিজহস্তে চন্দ্রাতপের স্বর্ণদণ্ড ধারণ করিয়া আসিতেছেন। চন্দ্রাতপের নিম্নে স্বর্ণ নির্ম্মিত ছত্রদণ্ডধারী পাটলীপুত্রের সেই লোলচর্ম্ম মহাস্থবির। তাঁহার পার্শ্বে শ্বেতাঙ্গ দীর্ঘকায় শ্বেতবস্ত্র-পরিহিত জনৈক প্রৌঢ় ব্যক্তি দক্ষিণহস্তে একটি স্ফটিকাধার লইয়া আসিতেছেন। মহাস্থবির সেই স্ফটিকাধারের উপর স্বর্ণছত্র ধারণ করিয়া আছেন। হিমক্লিষ্ট প্রভাতে নগ্নপদ ও স্বল্পাচ্ছাদন সত্ত্বেও বোধ হইতেছিল যেন, তাঁহার বয়সের অর্দ্ধ শতাব্দী কালের হ্রাস হইয়া গিয়াছে, লোলচর্ম্ম পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, কালভারাবনত দেহযষ্টি দণ্ডের ন্যায় তুঙ্গ হইয়াছে, বোধ হয় নির্ব্বাণ লাভ হইলেও তাঁহার আকারের এইরূপ পরিবর্ত্তন হইত না। তাঁহার পার্শ্বচর প্রৌঢ়কে দেখিয়া জনসঙ্ঘের মধ্যস্থিত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিমাত্রই তাঁহাকে সসম্মানে অভিবাদন করিলেন, অন্যান্য সকলে বিস্ময়স্তিমিত নয়নে চাহিয়া রহিল। অদ্য দেবযাত্রায় তথাগতের শরীর-ভার বহনের সৌভাগ্য কাহার হইল তাহা
৫৪