আর্য্যাবর্ত্তের রাজাগণ আসন্ন বিপৎপাত সম্বন্ধে চিন্তাশূন্য। যখন শকজাতি আক্রমণ করিবে, তখন রাজন্যবর্গ একে একে সকলেই বিনষ্ট হইবে। ইহার পর মহাস্থবির তুষ্ণীম্ভাব ধারণ করিলেন। অনেকক্ষণ পরে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া সিংহদত্ত কহিলেন, মহারাজ! সযত্নরক্ষিত তথাগতের শরীরাংশ আপনার হস্তে সমর্পণ করিলাম। যদি কোন দিন রাজ্যের দুর্দ্দিন উপস্থিত হয়, যদি আপনার রাজ্যে আপনার রাজ্যবাসিগণ তথাগতের ধর্ম্মে বীতরাগ হয়, তাহা হইলে আমার সনির্ব্বন্ধ অনুরোধ এই যে, আপনি বা আপনার উত্তরাধিকারিগণ আমাদিগের শরীরাংশ আমাদিগকে প্রত্যপর্ণ করিবেন। তক্ষশীলা মহনগরীর মহাবিহারের অধ্যক্ষ যিনি থাকিবেন তিনি সাদরে ইহা গ্রহণ করিবেন। সিংহদত্ত কল্পনাও করিতে পারেন নাই যে, যেদিন নগরবাসিগণ তথাগতের ধর্ম্ম বিস্মৃত হইবে, তাহার বহুপূর্ব্বে হূণগণের পরশুর আঘাতে তক্ষশিলার ভিক্ষুগণের মস্তক দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইবে; বিশাল মহাবিহারের অগ্নিদগ্ধ ভস্মাবশেষ বায়ুভরে সিন্ধু তীরে উপনীত হইবে। যেদিন শরীরনিধানের উপরে মহাভার স্তূপ ভাঙ্গিয়া পড়িবে, সেদিন তক্ষশিলা নগরীর অস্তিত্ব পর্য্যন্ত থাকিবে না; খস্, হূণ, দরদবংশজাত মেষপাল মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষের উপরে সানন্দে মেষচারণ করিবে; তক্ষশিলা নগরীর নাম পর্য্যন্ত আর্য্যাবর্ত্তে শ্রুত হইবে না।
রাজা, সিংহদত্ত, মহাস্থবির ও রাজ্ঞীগণ গর্ভগৃহের বাহিরে আসিলে সশব্দে শিলাখণ্ড দ্বয় স্বস্থানে আসিল। তখন উৎসব আমোদ থামিয়া আসিয়াছে, দীপমালা নির্ব্বানোন্মুখ, হিমকণস্পৃষ্ট শীতলবায়ু নিদ্রালস নাগরিকগণকে স্পর্শ করিতেছে, অধিকাংশ ব্যক্তি নগরাভিমুখে ফিরিয়া চলিয়াছে; বিপণিশ্রেণী যেন ইন্দ্রজালবলে অন্তর্হিত হইয়াছে। কেবল
৬৩