করিয়া দিলেন। পালঙ্ক, বিছানা, বালিস, আলমারি, বাক্স, ছবি, কাঁচের বাসন, পিত্তলের বাসন, প্রভৃতি আসবাবে গৃহ পূর্ণ হইয়া গেল। আমার আর কোন দ্রব্যেরই অভাব রহিল না। সঙ্গে সঙ্গে আমার পরিচর্য্যার নিমিত্ত একজন ‘কাহার’ চাকরও নিযুক্ত হইল।
“আমি আমার পিতামাতার বাড়ীতে যেরূপ দরিদ্রেরমত থাকিতাম, যেরূপ কষ্টে দিন অতিবাহিত করিতাম, তাহার তুলনায় আজ আমি রাজরাণীর অবস্থায় প্রবেশ লাভ করিলাম। মনে আর সুখ ধরে না, হৃদয় যেন আহ্লাদে আটখানা হইতে লাগিল। কিন্তু সময় সময় আমার পিতামাতার দুঃখের অবস্থার সহিত আমার অবস্থার তুলনা করিয়া মনে কষ্ট পাইতাম; সেরূপ কষ্ট অতি অল্প সময়ের নিমিত্ত হইত।
“সন্ধ্যা হইতে হইতেই সেই বাড়ীর অবস্থার পরিবর্ত্তন হইতে আরম্ভ হইল। বাড়ীর সকলেই মনোহারিণী বেশভূষায় সুসজ্জিত হইয়া যেন নূতন রূপ ধারণ করিতে লাগিল। যিনি কৃষ্ণাঙ্গী, তিনি আর এখন কৃষ্ণাঙ্গী রহিলেন না, আপাদমস্তক পাউডার মাখিয়া তিনিও এখন গৌরাঙ্গী হইয়া দাঁড়াইলেন। অলঙ্কারে সকলেই ভূষিত হইলেন; যাহাদের সুবর্ণময় অলঙ্কার নাই, তাহারাও পিত্তলের অলঙ্কারাদি দিয়া সেই স্থান পূর্ণ করিয়া দিলেন। সেই সকল অলঙ্কার এরূপ যত্নের সহিত ব্যবহৃত হইয়া থাকে যে, যাহারা না জানেন, তাহারা উহা দেখিয়া হঠাৎ বলিতে সাহসী হয়েন না যে, উহা সুবর্ণ-নির্ম্মিত অলঙ্কার নহে। এইরূপে সুসজ্জিত হইয়া কেহবা উপরের বারান্দায়, কেহবা আপনার ঘরে ও কেহবা নীচের ঘরের জানালা খুলিয়া তাহার নিকট উপবেশন করিল। দিবাভাগে যে স্থান কেবলমাত্র স্ত্রীলোকের পুরী বলিয়া অনুমান হইতেছিল,
৩