পাতা:পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাহাড়ে মেয়ে।
৪১

সকলেই আমার ব্যাপার জানিতে পারিলেন। যে উপায়ে আমি লোকদিগকে প্রতারণা করিতাম, তাহা সকলেই অবগত হইলেন। তখন আর কেহই আমার বাড়ীতে আসেন না; আমাদিগের কথায় আর কেহ প্রত্যয় করেন না। ইহার পর আমাদিগের জীবিকানির্ব্বাহের অতিশয় কষ্ট হইতে লাগিল, গহনাগুলি এক একখানা করিয়া সমস্তই বন্ধক দেওয়া, এবং পরে বিক্রীত হইয়া গেল। অধিক কি, তখন ভরসার মধ্যে রহিল, অমর বাড়ীখানা। কিন্তু তাহাও যে রাখিতে পারিব, এরূপ আশা হৃদয় হইতে দিন দিন অন্তর্হিত হইতে লাগিল। কারণ, আমি পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, তখন আর সে বয়স ছিল না, সে সৌন্দর্য্য ছিল না, সে রূপলাবণ্যও ছিল না। আমাকে দেখিবার নিমিত্ত তখন আর কেহই ব্যগ্র হইতেন না। বারান্দায় একবার বাহির হইলে যাহাকে দেখিবার নিমিত্ত রাস্তায় লোক ধরিত না, সে এখন রাস্তায় রাস্তায় বেড়াইলেও কেহ তাহাকে একবারের নিমিত্ত চাহিয়াও দেখেন না! পূর্ব্বে যাহার সুমধুর গীতধ্বনি সুস্বর বাদ্যযন্ত্রের সহিত মিলিত হইয়া যাহার কর্ণকূহরে একবার প্রবেশ করিত, তিনিই স্পন্দহীন চিত্র-পুত্তলিকার ন্যায় সেই স্থানেই দণ্ডায়মান থাকিতেন—সমস্ত সুখ-দুঃখ, কার্য্য-কলাপ ভুলিয়া দুই দণ্ডকাল একাগ্রমনে তাহা শুনিতেন; কিন্তু এখন সেই লোকের, সেই মুখের সেই গীতধ্বনি যাঁহারই নিকট গীত হইত, তিনিই বিরক্ত হইয়া তৎক্ষণাৎ সেই স্থান পরিত্যাগ করিয়া উঠিয়া যাইতেন। হায়! অপূর্ব্ব জগতের কি অদ্ভুত লীলা!


 “যদি আমি পূর্ব্বে ভাবিতাম যে, রূপ-যৌবন কিছুই চিরস্থায়ী নহে, ধন-সম্পদ, দাসদাসী প্রভৃতি কিছুই চিরকাল থাকিবে না,