বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দারােগার দপ্তর, ১৪৬ সংখ্যা।

 “আমার বাল্যকাল ক্রমে অতীত হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে ক্রমে আমি বার বৎসরে উপনীত হইলাম। আমাদিগের দেশের প্রথা-অনুসারে বালিকাগণের দশ বৎসর বয়ঃক্রম হইতে না হইতেই প্রায় বিবাহ হইয়া থাকে। কিন্তু আমার পিতা মাতা আমার বার বৎসর বয়ঃক্রমের মধ্যেও আমার বিবাহের কোনরূপ বন্দোবস্ত করিয়া উঠিতে পারিলেন না। কারণ, আমাদিগের সমান ঘরে সহজে বর পাওয়া দায় হইয়া উঠিল। পিতা গোঁড়া কুলীন ছিলেন। সুতরাং আমাদিগের সমান ঘরের পরিবর্ত্তে অপর কোন ঘরে বা কিছু নীচ ঘরে আমার বিবাহ দিতে পারিলেন না। ক্রমে আরও এক বৎসর অতীত হইয়া গেল। আমি তের বৎসরে উপনীত হইলাম। পিতা মাতা আর আমাকে কোন প্রকারেই অবিবাহিতা রাখিতে পারেন না। সুতরাং পিতা খুঁজিয়া খুঁজিয়া পূর্ব্ববঙ্গ হইতে পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক এক জন 'স্বঘর-স্বভাব’ কুলীনকে আনিয়া, তাঁহারই সহিত আমার পরিণয়-কার্য্য সম্পন্ন করিয়া দিলেন।

 “স্বামীর মুখ দেখিয়াই হৃদয় জ্বলিয়া উঠল। বহুদিবস সঞ্চিত পরিণয়ের সুখ-পিপাসা মিটিয়া গেল। কিন্তু পিতা মাতা বা অপর গুরুজনের মধ্যে কাহারও নিকট আপন মনের কথা প্রকাশ করিতে পারিলাম না। হৃদয়ের ভিতর মুখ লুকাইয়া কেবল কাঁদিয়া কাঁদিয়াই দিন অতিবাহিত করিতে লাগিলাম।

 “আমার স্বামী কেবল যে বৃদ্ধ, তাহা নহেন তিনি আরও দশ বারটী বনিতার স্বামী। এইরূপ অবস্থা দেখিয়া, পিতা যে কিরূপে আমার সহিত তাঁহার বিবাহ দিলেন, তাহা ভাবিয়া চিন্তিয়া আমি কিছুই স্থির করিয়া উঠিতে পরিলাম না। বিবাহ-ব্যবসায়জীবি স্বামী আমার বিবাহের পুর্ব্বেই তাঁহার পাওনাগণ্ডা বুঝিয়া লইয়াছিলেন।