পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হয় না, এটুকু জ্ঞান কি কুমুদের নাই ? পরের চেষ্টায় মনের যে বিকাশ তাহা অস্বাভাবিক, অগ্ৰীতিকর। মতিকে ছাচে ঢালিয়া একটা স্থষ্টিছাড়া অদ্ভুত জীবে পরিণত করিবার ধৈৰ্য কুমুদের থাকিবে কিনা সন্দেহ,-থাকিলেও, সেই পরিবর্তিত মতিকে কি তাহার ভাল লাগিবে ? কি ভাবেই বা মাতিকে সে গড়িয়া তুলিবে ? লেখাপড়া গান-বাজনা ছবি-আঁকা-শুধু এই সব শিক্ষা তাকে দেওয়া সম্ভব। তার অতিরিক্ত আর কি করিতে পারিবে কুমুদ ? মতির নিজস্ব সত্তাটুকু পৰ্যন্ত কুমুদ যদি তাকে দান করে, স্বতন্ত্র সম্পূর্ণ মানুষ হিসাবে কি মুল্য থাকিবে মতির ? কুমুদ এত জানে, এটুকু জানে না যে প্রিয়াকে মানুষ গড়িয়া লইতে পারে না। মেয়ের মতো যাকে শিখাইয়া পড়াইয়া মানুষ করা যায়। তাকে বসানো চলে না প্রিয়ার আসনে ? ভাবিয়া শশী কিছু ঠিক করিতে পারে না। এক সময় সে “খেয়াল করিয়া অবাক হয় যে মতির সঙ্গে কুমুদের ভালবাসার খেলাটা তাহার বিশেষ খাপছাড়া মনে হইতেছে না-ওদের বিবাহের কথাটাই তার কাছে অস্থষ্টি ছাড়া ‘কাণ্ডের মতো ঠেকিতেছে। মতিকে নষ্ট করিয়া কুমুদ যদি চলিয়া যাইত, দুঃখের শশীর সীমা থাকিত না, তবু যেন মনে হইত অস্বাভাবিক কিছু ঘটে নাই, দুজনের মধ্যে যে দুস্তর পার্থক্য তাহাদের তাহাতে দু-দিনের নিন্দনীয় ঘনিষ্ঠতা ছাড়া আর কি সম্পর্ক তাহদের মধ্যে হওয়া সম্ভব ? ওদের বিবাহ ववांखद, अर्थहीन । এই চিন্তায় শশী লজ্জা পায় । মতির জন্য তার মনে বাৎসল্য-মেশানো এক প্রকার আশ্চৰ্য মমতা আছে, মতিকে কুমুদের বেী হওয়ার্শ্ব’ অনুপযুক্ত মনে করিতে তাহার কষ্ট হয়। সেদিন বিকালে মতির সঙ্গে শশীর দেখা হইল। মতি একড়াল কুমড়া ফুল লইয়া তাহদেরই বাড়ি আসিয়াছিল। শশীকে যে কথাটা জানানো হইয়াছে, কুমুদ হয়তো মতিকে এ সংবাদ দিয়াছিল। শশীকে দেখিয়া মুখখানা তার রাঙা হইয়া উঠিল। তারপর একটু হাসিল মতি,-হঠাৎ লাজ পাইলে এ বয়সে ঠোঁটে একটু হাসির ঝিলিক দিয়া যায়। মতির মুখখানা আজ শশীর অসাধারণ সুন্দর মনে হইল। সে ভাবিলা হয়তো “কুমুদ ভুল করে নাই। হয়তো সত্যই একদিন সে মতিকে রূপে গুণে অতুলনীয়া করিয়া তুলিবে । মতি চলিয়া গেলে কুমুদের এই শক্তিতে কিন্তু শশীর আর বিশ্বাস রহিল। না । খনিগর্ভের হীরার মতোই বটে মতি,-তাকে একদিন অনুপমা ও জ্যোতির্ময়ী করিয়া তোলাও সম্ভব, কিন্তু কুমুদ তাহা পরিবে না । ভবিষ্যতের A) R