পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যদি করেন। যদি ৷ তীব্ৰ চাপা গলায় এই কথা বলিয়া কুকুম পরীক্ষাংশই আবার হাসিয়া ফেলিল, জ্বংসারে অত যদি চলে না ছোটবাবু। আপনি করবেন মতিকে বিয়ে! জীবনটা আপনার নষ্ট হয়ে যাবে না ? তখন শশী বলিল, কুমুদ অবশ্য একেবারে অমানুষ নয়, রোজগার-পাতিও মন্দ করে না

  • কুকুম বলিল, মতির ভাগ্যি ওকে কুমুদ বাবুর পছন্দ হয়েছে। পড়ত গিয়ে কোনও চাষার ঘরে,-দুবেলা চেলা কাঠের মার খেয়ে প্ৰাণটা হুড়ির বেরিয়ে যেত। অনেক পুণ্যিতে এমন বীর জুটেছে ওর।

হোক। তবে, তাই হোক ! মতি কি বলে বৌ ? কি বলবে ? দিন গুনছে। দিন শুনিতেছে মতি । গুনুক ! কুহুমের উপর রাগে শশীর মন জ্বালা করিতে থাকে। সেদিন প্ৰত্যুষে তালবনে কুজমের মধ্যে যে সরলা বালিকাকে আবিষ্কার করিয়া সে পুলকিত হুইয়াছিল, আজ সে কোথায় গেল ? কি পাকা বুদ্ধি কুহুমের! কি নিখুঁত কৌশলে ’মতির বিবাহ সম্বন্ধে সে তার মনের মোড় ঘুরাইয়া দিল ? দুদিন ভাবিয়া সে যা স্থির করিতে পারে নাই, আধা ঘণ্টার মধ্যে দুটো আচল যুক্তি দেখাইয়া কুসুম কতৃত সহজে সব সমস্যার মীমাংসা করিয়া দিল । কুসুমের কাছে দাঙ্কাইয়া মতির ভালমন্দ সম্বন্ধে এমন সে নির্বিকার হইয়া উঠিল। কিসে। হয় সম্পনায়াসে বলিয়া বসিল, হোক তবে, তাই হোক ? তা ছাড়া, এসব আজি “... কি বলিতেছে কুহুম ? এমনি চাঁদনি রাতে আপনার সঙ্গে কোথাও চলে যেতে সাধ হয় ছোট বাবুই: · গভীৱী দুঃখের সঙ্গে শশীর মনে হয়, একথা কুসুমের বানানো । মতিকে পাছে সে <! আবার নিজে বিবাহ করিয়া কুমুদের হাত হইতে বাচাইতে চায়, তাই কুহুম এই মন-রাখা কথা বলিয়াছে। বলুক। সে তো কুমুদ নয়, তাল্প জীবনে সবই অভিনয় । তবু, ”চাদের আলোয় চারিদিক আজ কেমন স্বপ্ন দেখিতেছে অ্যাখে । এ যেন বিশ্বাস করিতে ইচ্ছা হয় না। কুসুমের কুটিলতার বিজ্ঞা এমন সময় এত কষ্ট পাওয়া তাহার ভাগ্যে ছিল। কিন্তু কেন সে দাড়াইয়া আছে, কেন সে চলিয়া যাইতে পারে না ? কে জানে, হয়তো জীবনের বিতুষ্ণা ও-আত্মপ্লানি-ভরা মুহুর্তগুলির আকর্ষণ তার কাছেই এত তীব্ৰ ? কুমুদ হয়তো ছুটিয়া পলাইত, বলিয়া যাইত তুমি গোলায় যাও কুনুম। S 0 8