পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে যেন স্থায়ীভাবেই মুম্বড়াইয়া গিয়াছে। কাজে যেন উৎসাহ পায় না, প্ৰতিভাবান স্বামীর সুখ-সুবিধা ও আরামের ব্যবস্থা করিতে সব সময় ব্যাকুল হইয়া থাকে না, ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া কি যেন একটা দুর্বোধ্য ব্যাপার বুঝিবার চেষ্টায় ব্যাকুল হয়। মাঝে মাঝে মতি টের পায় কুমুদ ও তার মধ্যে প্ৰকাশ্য কথা ও ভাবের আদান-প্ৰদানগুলি জয়া নিবিড় মনোযোগের সঙ্গে ’ লক্ষ্য করিতেছে। কি আছে জয়ার মনে ? এমন তার নজর দেওয়া কেন ? ভয়ে * মতির, বুক টিপচিপ করে । অবসর সময়ে, কখনো কাজ ফেলিয়াও, একটা বড় ক্যানভাসে বনবিহারী তুলি বুলায়। এই ক্যানভাসটিকে জয়া এতক্লিন গৃহ-দেবতার মতো যত্ন করিত, সাবধানতার সীমা ছিল না। এটি নাকি বিক্রির জন্য নয়, লোকের ফরমাশী নয়, প্ৰতিভার ফরমাশে প্রেরণার মুহুর্তগুলিতে বনবিহাৰী এতে রঙ দেয় ; একদিন দেশবিদেশের একজিবিশনে ঘুরিয়া ঘুরিয়া এই ছবিটি চিত্রকরকে যশস্বী করিবে । অত সব মতি বোঝে না । সে শুধু জানে সমস্ত ছবির 戴了 এই ছবিখানা বিশেষ একটা কিছু, শেষ হইয়া গেলেই ছবিখানাকে উপলক্ষ্য করিয়া বড় বড় ব্যাপাৱ ঘটিতে থাকিবে । দিনের পর দিন জয়া ও * বনবিহারীকে ছবিখানার বিষয়ে সে আলোচনা করিতে শুনিয়াছে । কদিন এ আলোচনাতেও জয়ার যেন প্ৰবৃত্তি ছিল না । অথচ মাঝে মাঝে ঢাকা তুলিয়া তীব্ৰ তীক্ষ দৃষ্টিতে সমাপ্ত-প্ৰায় ছবিখানার দিকে মতি তাহাকে, চাহিয়া থাকিতে দেখিয়াছে। জয়ার মতো ঈষৎ স্থূলকায়া এক রমণী কঙ্কালসার এক * শিশুকে মাটিতে ফেলিয়া ব্যাকুল আগ্রহে এক পলাতক সুন্দর দেবশিশুর দিকে হাত বাড়াটুয়া আছে-ছবিখানা এই। কোথায় কি অদ্ভুত অাছে ছবিটিতে মতির চোখে তো কখনো পড়ে নাই, তবে সেটা নিজের চোখের অপরাধ বলিয়া জানিয়া লইয়াছে। জয়ার কথা কে অবিশ্বাস করিবে যে এরকম ছবি পৃথিবীতে দু-চারখানার বেশি নাই ? கே কয়েকদিন পরে সকালবেলা এই ছবিখ্যানাই জীয়া ফ্যাসধক্যাস করিয়া ছিািড়য়া ফেলিল । তেমন কাণ্ড, জয়ার” তেমন মূর্তি, মতি কখনো স্থাখে নাই। কুমুদ বাঁড়ি ছিল না, বেলা তখন প্ৰায় দশটা । মতি রান্না প্ৰায় শেষ করিয়া আনিয়াছিল। জয়া সকাল হইতে ভয়ানক গভীর হইয়া ছিল, রান্ত্ৰে বোধ হয় 'স্বামীর সঙ্গে তার কলহু হুইয়াছে। দু-একটা কথা বলিয়া জবাব না পাওয়ায় কথা বলিত্ত্বে মতির আর সীহুস হয় নাই । কিছুক্ষণ আগে ভাত চাপাইয়া জয় রান্নাঘরের বাহিরে