পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবাধ্য, মেয়ে কি হবেন ঠিক-কি ? চক্ষুলে-টুলে দিয়ে কাজ নেই বাপু -শেখা না, বাড়িতেই শেখা ৷ 弘 কুমুদ ਜੋ মুখের ভাব লক্ষ্য করিতেছিল, বলিল, বুঝিয়ে দিস, আজকাল মেয়েদের স্কুলে না দিলে চলে না । বুঝিয়ে ? বাবাকে ? বাবা সেকেলে। কথা বদলাইয়া বলিল, ঘর ক্ষেণেগছীয় বলছিলি ? লোকের অভাব কি ! এ হল বাংলাদেশ, একজন রোজগার করে, দশজনে খায়। ঘর গোছাবার লোকের অভাব নেই। তবে-বন্ধুকে শশী চোখ ঠারিল, নিজের ঘর আমি নিজেই গোছাই । শশীকে যামিনী কবিরাজের বৌ-এর কাছে যাইতে হইবে। এ কর্তব্য অবহেলা করিবার উপায় ছিল না ! বন্ধুকে খাই-এর মোয়া আর চন্দ্ৰপুলি খাওয়াইয়া শশী বিদায় লইল । গ্রামে পর্দা-প্ৰথা শিথিল কিন্তু সে গ্রামেরই চেনা মানুষের জন্য । শশীর বাড়ির মেয়েরা সকাল বেলা অন্তঃপুরে পাক খায়। কুমুদ উৎসুক দৃষ্টিতে খোলা দরজা দিয়া প্ৰকাণ্ড সংসারটির গতিবিধি যতটা পারে দেখিতেছিল, খানিক পরে ছোট একটি ছেলে আসিয়া দরজাটা ভেজাইয়া দিয়া গেল। কুমুদ আহত “ হুইয়া ভাবিল, আমি তো ওদের দেখিনি ? ওদের কাজ দেখিছিলাম যে আমি শ্য সকলে মিলে কি রচনা করছে তাই দেখছিলাম । জামাটি গায়ে দিয়া কুমুদ বেড়াইতে বাহির হইয়া গেল। একটি পরিবারের গোপন মৰ্ম-স্পন্দন দেখিয়া ফেলার অপরাধ এক-এক অন্তঃপুরের একটা ঘরে বসিয়া সঙ্ক করা কঠিন। বাড়ি হইতে বাহির হইয়া পড়িয়া কুমুদের চোখে পড়িল হারু ঘোষের বাড়ির পিছনে তালবনের ওপাশে উচু মাটির টিলাটির দিকে । সে সেইদিকে চলিতে আরম্ভ করিল। জীবনে সে যত পুণ্য অর্জন করিয়াছে, তার পাপের হিসাবটা আজ এখানকার মতো ধরিয়া তালবনের গভীর নির্জনতায় হঠাৎ তাহার পুরস্কার কে দিল মানুষের বুদ্ধিতে তাহার বিশ্লেষণ নাই। হয়তো শশীয় বাড়ির মেয়েরা অকারণে তাহাকে যে লাঞ্ছনা দিয়াছিল ८न्नद्म निद्मन् দেবতা ভোরের বাতাস পাখির কলরব আর ঋজু তালগাছগুলির প্রহরায় --রাক্ষত-যুগৗন্তের পুরাতন নিভৃত শাস্তির উপলক্ষে ক্ষতিপূৱণ করিলেন । এত সহজে সেন্টিমেন্টাল করিয়া দিতে পারে, একটি স্বমুখী পরিবারের অন্তঃপুর ছাড়া পৃথিবীতে এমন স্থান আছে কুমুদ তাহা জানিত না ।