পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
১০৭

মেয়েরা কাঁদচে, পুরুষেরা উত্যক্ত হয়ে ভর্ৎসনা করচে, চুপ করো।
কুকুর ডেকে ওঠে, চাবুক খেয়ে আর্ন্ত কাকূতিতে তার ডাক থেমে যায়।
রাত্রি পোহাতে চায় না।
অপরাধের অভিযোগ নিয়ে মেয়ে পুরুষে তর্ক তীব্র হতে থাকে।
সবাই চীৎকার করে, গর্জ্জন করে,
শেষে যখন খাপ থেকে ছুরি বেরোতে চায়
এমন সময় অন্ধকার ক্ষীণ হোলো,
প্রভাতের আলো গিরিশৃঙ্গ ছাপিয়ে আকাশ ভরে দিলে।
হঠাৎ সকলে স্তব্ধ;
সূর্য্যরশ্মির তর্জ্জনী এসে স্পর্শ করল
রক্তাক্ত মৃত মানুষের শান্ত ললাট।
মেয়েরা ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠ‍্ল, পুরুষেরা মুখ ঢাক‍্ল দুই হাতে।
কেউ বা অলক্ষিতে পালিয়ে যেতে চায়, পারে না;
অপরাধের শৃঙ্খলে আপন বলির কাছে তারা বাঁধা।
পরস্পরকে তারা শুধায়, “কে আমাদের পথ দেখাবে?”
পূর্ব্ব দেশের বৃদ্ধ বল্‌লে,
“আমরা যাকে মেরেচি সেই দেখাবে।”
সবাই নিরুত্তর ও নতশির।
বৃদ্ধ আবার বল্‌লে, “সংশয়ে তাকে আমরা অস্বীকার করেচি,
ক্রোধে তাকে আমরা হনন করেচি,
প্রেমে এখন আমরা তাকে গ্রহণ করব,
কেননা, মৃত্যুর দ্বারা সে আমাদের সকলের জীবনের মধ্যে সঞ্জীবিত
সেই মহা মৃত্যুঞ্জয়।”
সকলে দাঁড়িয়ে উঠল, কণ্ঠ মিলিয়ে গান করলে,
“জয় মৃত্যুঞ্জয়ের জয়।”