পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
পুনশ্চ

জ্যোতিষী বললে, “নক্ষত্রের ইঙ্গিতে ভুল হতে পারে না
তাদের সঙ্কেত এইখানেই এসে থেমেচে।”
এই বলে ভক্তি-নম্রশিরে
পথপ্রান্তে একটি উৎসের কাছে গিয়ে সে দাঁড়ালে॥
সেই উৎস থেকে জলস্রোত উঠ‍্চে যেন তরল আলোক,
প্রভাত যেন হাসি-অশ্রুর গলিত-মিলিত গীতধারায় সমুচ্ছল।
নিকটে তালি-কুঞ্জতলে একটি পর্ণকুটীর
অনির্ব্বচনীয় স্তব্ধতায় পরিবেষ্টিত।
দ্বারে অপরিচিত সিন্ধুতীরের কবি গান গেয়ে বল্‌চে,
“মাতা, দ্বার খোলো।”

১০

প্রভাতের একটি রবিরশ্মি রুদ্ধদ্বারের নিম্ন প্রান্তে
তির্যক্ হয়ে পড়েছে।
সম্মিলিত জন-সংঘ আপন নাড়ীতে নাড়ীতে যেন শুন‍্তে পেলে
সৃষ্টির সেই প্রথম পরমবাণী, “মাতা, দ্বার খোলো।”
দ্বার খুলে গেল।


মা বসে আছেন তৃণশয্যায়, কোলে তাঁর শিশু,
ঊষার কোলে যেন শুকতারা।
দ্বারপ্রান্তে প্রতীক্ষাপরায়ণ সূর্য্যরশ্মি শিশুর মাথায় এসে পড়ল।
কবি দিল আপন বীণার তারে ঝঙ্কার, গান উঠল আকাশে,
“জয় হোক্ মানুষের, ঐ নব জাতকের, ঐ চিরজীবিতের।”