পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
১১৫

ভ্রূ-কুটিল করে মহিষী বল্‌লে,
“অসুন্দরের জন্যে তোমার এই অনুকম্পার অর্থ বুঝিনে।
ঐ শোনো, ঊষার প্রথম কোকিলের ডাক,
অন্ধকারের মধ্যে তার আলোকের অনুভূতি।
আজ সূর্য্যোদয়-মুহূর্ত্তে তোমারও প্রকাশ হবে
আমার দিনের মধ্যে, এই আশায় রইলাম।”
রাজা বল্‌লে, “তাই হোক্, ভীরুতা যাক্ কেটে।”
দেখা হোলো।
টলে উঠল যুগলের সংসার।
“কী অন্যায়, কী নিষ্ঠুর বঞ্চনা,”—
বল্‌তে বল্‌তে কমলিকা ঘর থেকে ছুটে পালিয়ে গেল।
গেল বহুদূরে,—
বনের মধ্যে মৃগয়ার জন্যে যে নির্জ্জন রাজগৃহ আছে সেইখানে।
কুয়াশায় শুকতারার মতো লজ্জায় সে আচ্ছন্ন।
রাত্রি যখন দুই প্রহর তখন আধ-ঘুমে সে শুনতে পায়
এক বীণাধ্বনির আর্ত্তরাগিণী।
স্বপ্নে বহুদূরের আভাস আসে,
মনে হয় এই সুর চিরদিনের চেনা।
রাতের পরে রাত গেল।
অন্ধকারে তরুতলে যে-মানুষ ছায়ার মতো নাচে
তাকে চোখে দেখে না তাকে হৃদয়ে দেখা যায়,
যেমন দেখা যায় জনশূন্য দেওদার বনের দোলায়িত শাখায়
দক্ষিণ সমুদ্রের হাওয়ার হাহাকার মূর্ত্তি।
এ কী হোলো রাজমহিষীর।
কোন্ হতাশের বিরহ তার বিরহকে জাগিয়ে তোলে।
মাটির প্রদীপ-শিখায় সোনার প্রদীপ জ্বলে উঠ্‌ল বুঝি।