পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
৩৭

দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটেচে মেঘ,
পূবে হাওয়া বয়েচে শ্যামজম্বূ-বনান্তকে দুলিয়ে দিয়ে।
যক্ষনারী বলে উঠেছে
মাগো, পাহাড়সুদ্ধ নিল বুঝি উড়িয়ে।
মেঘদূতে উড়ে চলে যাওয়ার বিরহ,
দুঃখের ভার পড়ল না তার পরে,
সেই বিরহে ব্যথার উপর মুক্তি হয়েচে জয়ী।
সেদিনকার পৃথিবী জেগে উঠেছিল
উচ্ছল ঝরনায়, উদ্বেল নদীস্রোতে,
মুখরিত বন-হিল্লোলে,
তার সঙ্গে দুলে দুলে উঠেচে
মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিরহীর বাণী।
একদা যখন মিলনে ছিল না বাধা
তখন ব্যবধান ছিল সমস্ত বিশ্বে,
বিচিত্র পৃথিবীর বেষ্টনী পড়েছিল
নিভৃত বাসককক্ষের বাইরে।
যেদিন এল বিচ্ছেদ
সেদিন বাঁধন-ছাড়া দুঃখ বেরলো
নদী গিরি অরণ্যের উপর দিয়ে।
কোণের কান্না মিলিয়ে গেল পথের উল্লাসে।
অবশেষে ব্যথার রূপ দেখা গেল
যে কৈলাসে যাত্রা হোলো শেষ।

সেখানে অচল ঐশ্বর্য্যের মাঝখানে
প্রতীক্ষার নিশ্চল বেদনা।