পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
পুনশ্চ

ইতিহাসের পণ্ডিত বলেন, এ মন্দির কিরাত জাতের গড়া,
এ দেবতা কিরাতের।
একদা যখন ক্ষত্রিয় রাজা জয় করলেন দেশ,—
দেউলের আঙিনা পূজারীদের রক্তে গেল ভেসে,
দেবতা রক্ষা পেলেন নতুন নামে, নতুন পূজাবিধির আড়ালে,—
হাজার বৎসরের প্রাচীন ভক্তি-ধারার স্রোত গেল ফিরে।
কিরাত আজ অস্পৃশ্য, এ মন্দিরে তার প্রবেশ-পথ লুপ্ত।

কিরাত থাকে সমাজের বাইরে,
নদীর পূর্ব্বপারে তার পাড়া।
সে ভক্ত, আজ তার মন্দির নেই, তার গান আছে।
নিপুণ তার হাত, অভ্রান্ত তার দৃষ্টি।
সে জানে কী করে পাথরের উপর পাথর বাঁধে,
কী করে পিতলের উপর রূপোর ফুল তোলা যায়,—
কৃষ্ণশিলায় মূর্ত্তি গড়বার ছন্দটা কী।
রাজশাসন তার নয়, অস্ত্র তার নিয়েচে কেড়ে,
বেশে বাসে ব্যবহারে সম্মানের চিহ্ণ হতে সে বৰ্জ্জিত,
বঞ্চিত সে পুঁথির বিদ্যায়।
ত্রিলোকেশ্বর মন্দিরের স্বর্ণচূড়া পশ্চিম দিগন্তে যায় দেখা,
চিনতে পারে নিজেদেরই মনের আকল্প,
বহু দূরের থেকে প্রণাম করে।

কার্ত্তিক পূর্ণিমা, পূজার উৎসব।
মঞ্চের উপরে বাজচে বাঁশি মৃদঙ্গ করতাল,
মাঠ জুড়ে কানাতের পর কানাত,
মাঝে মাঝে উঠেচে ধ্বজা।