মন্দিরের চূড়ায় বাঁধা বড়ো ঘণ্টা দুলতে দুলতে
বাজতে লাগল ঢং ঢং।
আচম্কা ধ্বনি থামল একটা ভেঙে পড়ার শব্দে।
পৃথিবী যখন স্তব্ধ হোলো
পূর্ণপ্রায় চাঁদ তখন হেলেচে পশ্চিমের দিকে।
আকাশে উঠচে জ্বলে-ওঠা কানাতগুলোর ধোঁয়ার কুণ্ডলী,
জ্যোৎস্নাকে যেন অজগর সাপে জড়িয়েচে।
পরদিন আত্মীয়দের বিলাপে দিগ্বিদিক যখন শোকার্ত্ত,—
তখন রাজসৈনিকদল মন্দির ঘিরে দাঁড়ালো,
পাছে অশুচিতার কারণ ঘটে।
রাজমন্ত্রী এল, দৈবজ্ঞ এল, স্মার্ত্তপণ্ডিত এল।
দেখলে, বাহিরের প্রাচীর ধূলিসাৎ।
দেবতার বেদীর উপরের ছাদ পড়েচে ভেঙে।
পণ্ডিত বল্লে, সংস্কার করা চাই আগামী পূর্ণিমার পূর্ব্বেই
নইলে দেবতা পরিহার করবেন তাঁর মূর্ত্তিকে।
রাজা বললেন, “সংস্কার করো।”
মন্ত্রী বলেন, “ঐ কিরাতরা ছাড়া কে করবে পাথরের কাজ।
ওদের দৃষ্টি-কলুষ থেকে দেবতাকে রক্ষা করব কী উপায়ে,
কী হবে মন্দির-সংস্কারে যদি মলিন হয় দেবতার অঙ্গ-মহিমা।”
কিরাত-দলপতি মাধবকে রাজা আন্লেন ডেকে।
বৃদ্ধ মাধব, শুক্লকেশের উপর নির্ম্মল সাদা চাদর জড়ানো,—
পরিধানে পীতধড়া, তাম্রবর্ণ দেহ কটি-পর্য্যন্ত অনাবৃত,—
দুই চক্ষু সকরুণ নম্রতায় পূর্ণ,
সাবধানে রাজার পায়ের কাছে রাখলে একমুঠো কুন্দ ফুল,
প্রণাম করলে, স্পর্শ বাঁচিয়ে।
পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
৮৯
১২
