পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আন্ধা বন্ধু
১৯৩

মুখের বাঁশী বুকে তোমার চিকন[১] দাগ কাটে।
সে বাঁশী ভুলিতে বন্ধু হিয়া খানি ফাটে॥
বাঁশী বাজাও বন্ধু শিখাও মোরে গান।
আজি হতে পিয়া বন্ধু আমার পরাণ॥
আজি হতে তোমায় বন্ধু ছাইড়া নাই সে দিব।
নয়ানের কাজল কইরা নয়ানেতে থুইব॥
সে কাজল দেখিয়া যুদি লোকে করে দোষী।
হিয়ায় লুকাইয়া বন্ধু শুনবাম তোমার বাঁশী॥
হিয়ায় লুকান বন্ধু যুদি লোকে জানে।
পরাণ কটরায়[২] ভইরা রাখিব যতনে॥
বসন কইরা অঙ্গে পরব মালা কইরা গলে।
সিন্দুরে মিশাইয়া তোমায় মাখিব কপালে॥
চন্দনে মিশাইয়া তোমায় করব দেহ শীতল।
সুখে দুঃখে করব তোমায় দুই নয়ানের কাজল॥
বলুক বলুক লোকে মন্দ তাহা না শুনিব।
দুই অঙ্গ ঘুচাইয়া এক অঙ্গ হইব॥
আমার নয়ানে বন্ধু দেখিবা সংসার।
এমন হইলে ঘুচবো তোমার দুই আখির আঁধার॥
তোমার বুক লইয়া আমি শুনব তোমার বাঁশী।
মরণে জনমে বন্ধু হইলাম তোমার দাসী[৩]॥”

* * * *

“বিধুরা রাজকন্যা বুঝ্যা কথা কও।
দুঃখ ভরা ডালা কন্যা মাথায় কেন লও॥
চির সুখে আছ কন্যা দুঃখ নাই সে জান।
সরল পন্থ ছাইড়া কেন যাও সে কাঁটা-বন॥


  1. চিকন=সরু, তীক্ষ্ণ।
  2. কটরায়=কৌটায়।
  3. C.f. *জীবনে মরণে মরণে জীবনে, নিচয় হইলাম দাসী।” —চণ্ডীদাস।