পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চন্দ্রাবতীর রামায়ণ
২৫৯

যোগী বলে ‘ধনে মোর গো নাহি প্রয়োজন।
ঘরে আছে বনের ফল গো তাই কর দান॥১০
ক্ষুধায় অবশ অঙ্গ গো আইলাম তব দ্বারে।
অতিথে না দিলে ভিক্ষা গো যাই তবে ফিরে॥’১২

একটি বনের ফল গো অঞ্চলে বান্ধিয়া।
কুটিরের বাহির হইলাম গো ভাবিয়া চিন্তিয়া॥১৪
আমি কি গো জানি সখি কালসর্পবেশে[১]
এমনি করিয়া সীতায় গো ছলিবে রাক্ষসে॥১৬
প্রণাম করিনু আমি গো পড়িয়া ভূতলে।
উড়িয়া গরুড় পক্ষী গো সৰ্প যেমন গেলে॥১৮
রথেতে তুলিল মোরে গো দুষ্ট লঙ্কাপতি।
দেবগণে ডাকি কহি গো দুঃখের ভারতী॥২০
অঙ্গের আভরণ খুলি গো মারিনু রাক্ষসে।
পর্ব্বতে মারিলে ঢিল গো কিবা যায় আসে॥২২
কতক্ষণ পরে গো আমি হইলাম অচেতন।
এখনো স্মরিলে কথা গো হারাই চেতন॥২৪

জাগিয়া দেখিনু আমি গো আছি লঙ্কাপুরী।
আমারে বেড়িয়া পাশে গো বসি যত চেড়ী॥২৬
অশোক-কাননে গো বাস আমি অভাগিনী।
সেইদিন সাজিলাম গো যৌবনে যোগিনী॥২৮
বস্ত্র অলঙ্কার ত্যজি গো নিদ্রা ও আহার।
রাক্ষসের গৃহে থাকি গো করি অনাহার॥৩০


  1. এই রামায়ণের অনেকাংশের সঙ্গে মেঘনাদবধ কাব্যের আশ্চর্য্য রকমের ঐক্য দৃষ্ট হয়, আমার ধারণা, মাইকেল নিশ্চয়ই চন্দ্রাবতীর রামায়ণ গান শুনিয়াছিলেন, এই গান পূর্ব্ববঙ্গের বহুস্থানে প্রচলিত ছিল এবং এখনও আছে।