পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

ঘরে নাইসে থাকে মন তোমার লাগিয়া।
আমি ধুয়ার ছলনে কান্দি চক্ষে বসন দিয়া[১]
খাট পালঙ্করে ছাইড়া জমিনে বিছান।
জিজ্ঞাসিলে কই কথা আমার পুইড়া গেছে প্রাণ॥
অন্তরায় লোহার কবাট সেও খাইয়াছে ঘুণে।
নিশিদিন তোমার মুখ দেখি যে স্বপনে॥
আর না থাকিতেরে পারি গিরে চল্যা যাই।
দুষ্‌মনে দেখিলে লজ্জা রাখতে স্থান নাই॥
তোমারে ছাইড়ারে বন্ধু যাই নিজ ঘরে।
চরণ অবশ গতি মনে নাই সে ধরে॥
ভ্রমরা হইয়া বন্ধু লুকাও বনের ফুল।
আইজ নিশীথে হইব দেখা ঐনা নদীর কূল॥

নিশি রাইতে বাজল বনে মন-পাগেলা বাঁশী।
শিরে হাত দিয়া ভাবে অন্ধকারে বসি॥
পচ্চিম দুয়ার কন্যা ত্বরিতে খুলিল।
অস্তেব্যস্তে সুন্দর কন্যা পৈটায় পারা দিল॥
হস্তের জলের ঝারি ভুয়ে নামাইল।
গলার রতন হার দূরে ফালাইল॥
গায়ের যত অলঙ্কার একে একে খুলে।
উঠান হইয়া পার অস্তেব্যস্তে চলে॥
অন্ধকারে হস্তের তালা দেখা নাহি যায়।
একেলা ঘরের নারী সেইনা পথে যায়॥
একবার না ভাবে কন্যা চলে একেশ্বর।
ঘর হইল বাহির কন্যায় আপন হইল পর[২]


  1. “রন্ধন শালাতে যাই, তুয়া বঁধু গুণ গাই, ধোঁয়ার ছলনা করি কান্দি।”
    —লোচনদাস
  2. “ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর।

    পর কৈনু আপন, আপন কৈনু পর॥” —চণ্ডীদাস।