পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নসর মালুম

 নসর মালুমের পালাটি শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী মহাশয় প্রধানতঃ কাঁঠালভাঙ্গার নূরহোসেন ভাহৈয়ার নিকট হইতে সংগ্রহ করেন। এই নূরহোসেন ও তাহার জ্ঞাতিরা বংশানুক্রমে পালাগান গাহিয়া আসিতেছে। নূরহোসেনের পিতার নাম কোর্ব্বান আলী। ইনিও নসর মালুমের পালা গাহিতেন। কোর্ব্বান আলীর পিতা হায়দর আলীই এই পালা-গায়কদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা অধিকতর প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। এখনও এই অঞ্চলে পরিণত বয়স্ক অল্পসংখ্যক শ্রোতারা আছেন যাঁহারা হায়দরের করুণরসউদ্দীপনার প্রশংসা করিয়া থাকেন। এই পালা-গানের সময়ে হায়দর সমুদ্রে বাণিজ্য-দস্যুদের আক্রমণ এবং নায়কনায়িকার প্রেমের যেন জীবন্ত ছবি আঁকিয়া যাইত। চাটগাঁয়ের লোকেরা এখনও তাহার গানের কথা ভুলিতে পারে নাই। ইহাদের কৌলিক উপাধি ভাহৈয়া। এই শব্দটা ভাবুক শব্দের অপভ্রংশ বলিয়া মনে হয়। ভাবুক শব্দের লৌকিক অর্থ চিন্তাশীল নয়, যাহারা ভাব (feeling) উদ্রেক করিতে পারে তাহাদেরই লৌকিক কথায় ভাবুক বলে; কিন্তু ভাহৈয়া শব্দ ভ্রাতৃ শব্দেরও অপভ্রংশ হইতে পারে। যে নূরহোসেন গায়েনের নিকট হইতে আশুবাবু পালাটি সংগ্রহ করিয়াছেন সে এই গান গাহিয়া উপজীবিকা অর্জ্জন করে বটে, কিন্তু সমস্ত পালাটি তাহার মুখস্থ নাই। এখন পালা-গানের দিকে লোকের সেরূপ উৎসাহ নাই এবং পালা-গায়কেরাও আর তাদৃশ মনোযোগের সহিত গানগুলি শেখে না। নূরহোসেন ভাহৈয়া যে সকল অংশ ভুলিয়া গিয়াছে তাহা সে নিজে গদ্যভাষায় জোড়াতালি দিয়া বর্ণনা করে। সুতরাং ইহার প্রদত্ত সংগ্রহের উপর আশুবাবু ততটা নির্ভর করিতে পারেন নাই। কাঁঠালভাঙ্গার নিকটবর্ত্তী মহিষমারা গ্রামে গুরুমিঞা নামক জনৈক “হারিগায়েন”এর (সারিগান-গায়ক) নিকট হইতে আশুবাবু আরও