পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
8৮8
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

কয়েকটি পদ সংগ্রহ করিতে পারিয়াছেন। কিন্তু তখনও পালাটি পূর্ণতা লাভ করে নাই। চট্টগ্রামের সমুদ্রকূলে মাতৃভাষার এই অক্লান্ত সেবক ও পালাগানভক্ত যুবক বহু পর্য্যটন করিয়া কর্ণফুলির মোহানার নিকট রহমন নামক সাম্পানের একজন মাঝির নিকট সম্পূর্ণ পালাটি প্রাপ্ত হন।

 পালা-গানটি নানাদিক দিয়াই কৌতুকাবহ এবং চিত্তগ্রাহী। ইহার নায়িকা আমিনা খাতুন পাতিব্রত্যে সীতা-সাবিত্রীর পাশে দাঁড়াইতে পারেন; সীতা অশোক বনে রাবণ কর্ত্তৃক যে ভাবে প্রলুব্ধ হইয়াছিলেন, আমিনা খাতুন এসাকের হস্তে তাহা হইতে কম লাঞ্ছিত হন নাই। তাঁহার পিতামাতা তাঁহার বৈরী হইয়াছিলেন। স্বামী তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। সীতা জানিতেন, রাম তাঁহাকে ভিন্ন কাহাকেও জানেন না, সুতরাং তাঁহার নির্ভর এবং একনিষ্ঠ প্রেম গৌরবান্বিত। কিন্তু বিনা দোষে স্বামি-পরিত্যক্তা আমিনা যে ভাবে একনিষ্ঠ প্রেমের মাহাত্ম্য রক্ষা করিয়াছিলেন, তাহা পাঠক সাশ্রুনেত্রে পড়িবেন। এই নিষ্ঠা, এই চরিত্রগৌরব―এই একব্রত সঙ্কল্প বাঙ্গালী রমণীর। তিনি মুসলমানই হউন, কি হিন্দুই হউন, তাহাতে কিছু আসে যায় না। ইঁহারা সকলেই বঙ্গজননীর স্তন্যপালিতা। নসর মালুম বহুগুণশালী হইয়াও ঈদৃশ রমণীরত্ন লাভের প্রকৃত যোগ্য নহেন। পালা-গানের অধিকাংশ নায়কের মতই এই নায়কটিও মেরুদণ্ডহীন। কিন্তু একদিকে কতকটা ছায়া ঘনীভূত না করিলে নায়িকার চরিত্র হয়ত তাদৃশ গৌরবে উজ্জ্বল হইয়া উঠিত না। আমিনা খাতুন রৌদ্র ও ছায়ার অন্তরালে বিচিত্র চালচিত্রের মধ্যে যেন ভগবতী-প্রতিমার ন্যায় ঝলমল করিতেছেন।

 কিন্তু নায়কনায়িকার কথাতো আমরা অনেক পালাগানেই পাইতেছি। আমিনা খাতুন উৎকৃষ্ট আট দশটি নায়িকার মধ্যে না হয় আর একটি হইলেন। এই পালা-গানটির বিশেষ প্রণিধানযোগ্য বিষয় বাঙ্গালার প্রাচীন ঐতিহাসিক কথা। ঘন উত্তাল তরঙ্গসঙ্কুল সমুদ্রের রূপ কবি যেন চক্ষের সম্মুখে আঁকিয়া দেখাইয়াছেন। বাণিজ্য-যাত্রীর নানা বিপদের কথা ইনি বিচিত্র রং ফলাইয়া চিত্রকরের তুলিতে আঁকিয়াছেন। পর্ত্তুগীজ দস্যু হার্ম্মাদের