পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮৬
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

এখনও মাঝে মাঝে মগ পুরোহিতেরা সেই চার্ট (মানচিত্র) সঙ্গে করিয়া লুক্কাইত ধনরত্ন খুঁজিতে আসে। অন্ততঃ সেগুলি যে তাহারা এখনও নিঃশেষ করিয়া লইয়া যাইতে পারে নাই, তাহার প্রমাণ এই যে দেয়াঙ্গের পাহাড়ের নিম্নে মাঝে মাঝে দেব-বিগ্রহ ও অর্থাদি এখনও পাওয়া যায়। এই সকল বিগ্রহের নাক-কাণ ভাঙ্গা নয়। তাহারা সম্পূর্ণ অক্ষত এবং এক স্থানে অনেকগুলি জড়ীভূত। সুতরাং ইহারা যে সে “মগধাওনি”র নিদর্শন তৎসম্বন্ধে সন্দেহ করিবার বিশেষ কারণ নাই। বিগ্রহগুলির মধ্যে অনেকগুলি নবম এবং দশম শতাব্দীর। এই পুস্তকে আমরা “মগ-ধাওনি”র নিদর্শন কতকগুলি বিগ্রহের ছবি দিলাম। বলা বাহুল্য এই পালাগানটিতে ‘মগ-ধাওনি’র উল্লেখ আছে এবং মগেরা শেষ কালে কি ভাবে ধনরত্ন উত্তোলন করিয়া লইয়া যাইত তাহার বর্ণনা আছে। ১৬৬৬ খৃষ্টাব্দে সায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম অধিকার করিয়া ছিলেন। এই সময়ের কিছু পরে এই পালা-গানটি বিরচিত হইয়াছিল বলিয়া মনে হয়। সুতরাং সম্ভবতঃ ইহা সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগের রচনা।

 আরাকানের রাজারা পর্ত্তুগীজদের প্রতি অনুগ্রহশীল ছিলেন। তাঁহারা অনেক সময়ে খৃষ্টধর্ম্মের প্রতি অনুগ্রহ দেখাইয়া ভূমি দান করিতেন। চাটগাঁয়ের সেণ্ট সিলাষ্টিকার কনভেণ্ট স্কুল এই প্রকার ভূমির উপরে প্রতিষ্ঠিত। তৎসম্বন্ধে কনভেণ্টের “প্রভিন্সিয়াল” মাদার অ্যাম্ব্রোজি ১৯২৯ সালের ১৬ই আগষ্ট যে চিঠি লিখিয়াছিলেন তাহার প্রতিলিপি আমরা পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকার চতুর্থ খণ্ডের প্রথম সংখ্যার ভূমিকায় দিয়াছি। ১৬৩৮ খৃষ্টাব্দে আরাকান রাজার অধীন মুকুট রায় নামক জনৈক ক্ষুদ্র মগ-রাজা পর্ত্তুগীজদের সঙ্গে একত্র হইয়া জলদস্যুদের প্রভাব বিস্তার করিবার সহায়তা করিয়াছিলেন।

 এই পালা-গানটিতে ‘দিয়াঙ্গের পাড়ি’ নামক স্থানের উল্লেখ আছে। উহা আধুনিক সময়ের দেয়াঙ্গের বন্দর। পর্ত্তুগীজেরা এই বন্দরটিকে ডায়াঙ্গ বলিত। পালা-গানটির উল্লিখিত “গোবধ্যার চর” নামক স্থান কর্ণফুলির মোহানার নিকট। ইহা বর্ষাকালে সমুদ্রগর্ভস্থ হয় এবং তারপর জাগিয়া উঠে। এজন্য ইহা বাসযোগ্য নহে। তবে এই চর বহুদিন পর্য্যন্ত