পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



শীলাদেবী

 ১৯২৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে চন্দ্রকুমার দে মৈমনসিংহের আদমগুজি নিবাসী কালু সেখ এবং কদমশ্রী গ্রামের নন্দলাল দাস নামক এক মাঝির নিকট হইতে এই পালাটি সংগ্রহ করেন।

 পালাটির ঘটনা সম্ভবতঃ ঐতিহাসিক। মৈমনসিংহের বহুস্থানে শীলাদেবী সম্বন্ধে বহু প্রবাদ প্রচলিত আছে। উক্ত জেলায় নববৃন্দাবনের আরণ্য প্রদেশে শীলাদেবী-সংশ্লিষ্ট অনেক কাহিনী এখনও শোনা যায়।

 এই পালাটির আর একটি সংস্করণ সম্বন্ধে আমরা জানিতে পারিয়াছি। মৈমনসিংহের গোপাল আশ্রম নিবাসী গোপালচন্দ্র বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি বহুপূর্ব্বে স্থানীয় ‘আরতি’ নামক পত্রিকায় শীলাদেবী সম্বন্ধে একটি পালার সারাংশ সঙ্কলন করিয়া দিয়াছিলেন। গোপালবাবু এখনও জীবিত আছেন এবং তাঁহার বয়স ৭৪৷৭৫ বৎসর হইবে। বর্ত্তমান পালার সঙ্গে আরতি পত্রিকায় প্রকাশিত পালাটির তুলনা করিলে দেখা যাইবে উভয় পালাই অনেকটা একরূপ হইলেও তাঁহাদের মধ্যে কিছু গুরুতর পার্থক্য বিদ্যমান। মুণ্ডাদস্যুর ব্রাহ্মণ-রাজগৃহে চাকরি গ্রহণ হইতে তাহার রাজকুমারীর পাণিপ্রার্থনা এবং অবশেষে বন্দীশালা হইতে পলায়ন ও কয়েক বৎসর পরে বন্য মুণ্ডার দল সংগ্রহ করিয়া ব্রাহ্মণ-রাজার প্রাসাদ লুণ্ঠন—এই কাহিনী উভয় পালাতেই একরূপ। ব্রাহ্মণ-রাজা তাঁহার কন্যা-সহ পলাইয়া আর একটি হিন্দু রাজার আশ্রয় গ্রহণ করেন—এই পালায় আমরা ইহাই পাইতেছি। কিন্তু আরতির সারাংশতে দেখা যায় যে ব্রাহ্মণ-রাজা পলাইয়া গাজীদের শরণাপন্ন হন। বঙ্গের ইতিহাসজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেই অবগত আছেন যে খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ ও চতুর্দ্দশ শতাব্দীতে পূর্ববঙ্গে গাজীদের অতুল প্রতাপ হইয়াছিল! তাহারা ভাওয়াল ও ধামরাই, সাভার এবং মৈমনসিংহের অনেক স্থানের হিন্দুগৌরব নষ্ট করিয়াছিল। যে গাজীর নিকট ব্রাহ্মণ-রাজা শীলদেবীকে

 ৬২