পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

লইয়া উপস্থিত হন, তিনি যথেষ্ট আতিথ্য দেখাইয়াছিলেন; কিন্তু গাজীর এক তরুণবয়স্ক পুত্র শীলাদেবীর রূপমুগ্ধ হইয়া তাঁহাকে বিবাহ করিবার জন্য চেষ্টিত হন। ব্রাহ্মণ-রাজা পলাইয়া নিজেকে মুসলমানের আত্মীয়তা হইতে রক্ষা করেন। ত্রিপুরার রাজা ব্রাহ্মণ-রাজাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা দেখাইয়া নিজ প্রাসাদের এক অংশে স্থান প্রদান করেন। এখানেও ত্রিপুরার যুবরাজ শীলাদেবীর অনুরাগী হইয়া পাণিপ্রার্থী হন। ব্রাহ্মণ-রাজা নানারূপ বিপদের অভিঘাতে বিচলিত হইয়া এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিতে পারেন নাই, এবং শীলাদেবীও ত্রিপুরার রাজকুমারের অনুরাগিণী হইয়াছিলেন। ত্রিপুরার যুবরাজ অসংখ্য সৈন্য লইয়া মুণ্ডা-দলনের অভিপ্রায়ে ব্রাহ্মণ-রাজার প্রদেশে অগ্রসর হন। মুণ্ডারা এবার প্রমাদ গণিল, কিন্তু সাহস হারাইল না। তাহারা রাজকুমারের অগ্রগামী সৈন্যের পথের নদীর বাঁধ ভাঙ্গিয়া দিল। বর্ষাকালের উন্মত্ত বন্যা নদীবক্ষ স্ফীত করিয়া একটা বৃহৎ ভূভাগ ভাসাইয়া ফেলিল। শীলাদেবী ত্রিপুরার রাজকুমারের পার্শ্বে পুরুষ যোদ্ধার বেশে সৈন্য পরিচালনা করিতেছিলেন। এই আকস্মিক বন্যার প্রকোপে রাজকুমারের সমস্ত সৈন্য ধ্বংস হইয়া যায় এবং শীলদেবী ও যুবরাজ অতল জলে নিমজ্জিত হইয়া প্রাণত্যাগ করেন। ইহার পরে অশিক্ষিত ও বর্ব্বর মুণ্ডার দলকে দমন করিতে ত্রিপুরা-রাজের বিশেষ কষ্ট পাইতে হয় নাই। তিনি সমস্ত মুণ্ডার দল জালের দড়ি দিয়া ঘিরিয়া ফেলিয়া তাহাদিগকে বন্দী করেন এবং তোপের মুখে তাহাদিগকে উড়াইয়া দেন। যে স্থানে মুণ্ডারা এইভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহার নাম ‘কাঁকড়ার চর’। এখনও সেই স্থানটিতে তাহাদের সম্বন্ধে অনেক গল্পগুজব প্রচলিত আছে।

 মূল ঘটনা ঐতিহাসিক। যে সময়ে কোন স্থানীয় কোন প্রসিদ্ধ ঘটনা ঘটিয়া থাকে তাহার অব্যবহিত পরেই তথাকার সাধারণ লোকেরা তৎসম্বন্ধে পালা প্রস্তুত করে। এই হিসাবে অনুমান করা যাইতে পারে যে মূল পালাটি চতুর্দ্দশ শতাব্দীতে বিরচিত হইয়াছিল, কারণ ঐ সময়েই গাজীরা অতি পরাক্রান্ত ছিল।

 ‘আরতি’তে যে পালাটির সারাংশ সঙ্কলিত হয় সে পালাটি হারাইয়া গিয়াছে, এখন আর তাহা পাইবার উপায় নাই। কিন্তু উহার সারাংশ দ্বারা