পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রাজা রঘুর পালা

 এই পালা-গানটি মৈমনসিংহের আইথর গ্রামনিবাসী আমাদের অন্যতম পালা-সংগ্রাহক শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রচন্দ্র দে কর্ত্তৃক সংগৃহীত।

 দ্বিতীয় খণ্ডে আমরা রাণী কমলার গানটি প্রকাশিত করিয়াছি। এই পালাটিও সেই গানেরই শেষাংশ। প্রথমটিতে রাণী কমলার স্বামিকুলের ইষ্টার্থ প্রাণ-বিসৰ্জ্জন এবং রাজা জানকীনাথের শোকোম্মত্ততা বর্ণিত আছে। ইহার ঐতিহাসিক বিবরণ আমি রাণী কমলার ভূমিকায় দিয়াছি, সুতরাং তাহার পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। যে দীঘিতে কমলা প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন তাহার একাংশ এখন সোমেশ্বর নদের গর্ভস্থ। এই দীঘির নাম ‘কমলা সায়র’। রাণী কমলার পালাটিতে ঐতিহাসিক ঘটনা কবি-কল্পনায় জড়িত হইয়া বড়ই চিত্তাকর্ষক হইয়াছে। অধরচন্দ্র নামক জনৈক কবি ঐ গানটি লিখিয়াছিলেন। তাঁহার ঊষার বর্ণনার সারল্য আমাদিগকে ঋগ্বেদের সূক্তগুলি স্মরণ করাইয়া দেয়। রাজার মৃত্যু-কথা টেনিসনের Mort d’Arthur এর মত এক লোকাতীত অপ্রাকৃত রাজ্যে লইয়া যায়। বস্তুতঃ নিম্নশ্রেণীর লোকেরা যে ঐতিহাসিক কাহিনীকে কিরূপ আশ্চর্য্য কবিত্বের আবরণ দিয়া সাজাইতে পারে, সেই পালাটি তাহার নিদর্শন। রাণী কমলার গাম্ভীর্য্য, অটুট সঙ্কল্প এবং বাৎসল্য অতি অপূর্ব্ব। যদিও তিনি একটি প্রাচীন কুসংস্কারের বশবর্ত্তী হইয়া প্রাণদান করিয়াছিলেন, তথাপি কবি তাঁহার যে মূর্ত্তি আঁকিয়াছেন তাহা সম্রাজ্ঞীরই মত; তন্মধ্যে হীনতার দৈন্য কিংবা অজ্ঞতার লেশ নাই। পাঠকের মনে রাণী কমলার মূর্ত্তি চিরতরে অঙ্কিত হইয়া থাকিবে। বিদেহী রাজ্ঞী শিশু রঘুনাথকে স্তন্য দান করিয়া স্বৰ্গপথে যাইতেছিলেন, তখন শোকোন্মত্ত রাজা জানকীনাথ সজোরে তঁহার অঞ্চল ধরিয়া টানিতেছিলেন, কিন্তু তাঁহাকে ধরিয়া রাখিতে পারিলেন না। স্বর্ণবিন্দুযুক্ত চেলাঞ্চলের অংশ তাহার মুষ্টিতে রহিয়া