পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজা রঘুর পালা
৪৯৫

চালিত পিনিস নৌকা তীরবৎ বেগে যখন দুর্গাপুর পৌঁছিল, তখন তথাকার প্রজারা যেরূপ আনন্দে তাঁহাকে অভিনন্দন করিয়াছিল তাহা আমরা কল্পনা করিতে পারি।

 পালাটি ক্ষুদ্র হইলেও কবি যুদ্ধকাহিনীর দ্রুত ছন্দে যে বর্ণনা দিয়াছেন তাহা একখানি ছবির ন্যায়। এই পালা বাঙ্গালার ইতিহাসের একটি ক্ষুদ্র পৃষ্ঠা কিন্তু ইহা ক্ষুদ্র হইলেও মূল্যবান্। বাঙ্গালা দেশের প্রাচীন প্রত্যেক রাজা সম্বন্ধেই যে এইরূপ পালা-গান প্রচলিত ছিল তৎসম্বন্ধে আমার সন্দেহ নাই। তাহার অনেকগুলি নষ্ট হইয়া গিয়াছে। চেষ্টা করিলে এখনও কতক কতক উদ্ধার করা যাইতে পারে। কালে হয়ত কোন ঐতিহাসিক এই মুষ্টি মুষ্টি রত্নকণা সংগ্রহ করিয়া আমাদের ইতিহাস-ভাণ্ডারে উপঢৌকন দিবেন, আমরা তাঁহারই প্রতীক্ষায় আছি।

 এই পালা-গানটিতে দুই একটা অসঙ্গতি আছি। সেগুলি প্রাচীন সংস্কারগত। গেঁয়ো কবিরা যদি শিক্ষার ত্রুটির জন্য তদ্রূপ দু’একটা ভুল করেন তবে তাহা মাৰ্জ্জনীয়।শিশু-রঘুনাথকে বন্দী অবস্থায় বাইশ মণ পাথর চাপা দিয়া রাখা হইয়াছিল। বাইশ মণ পাথরের চাপ দেওয়াটা পল্লী-গাথার একটা চিরাগত রীতি। ইশা খাঁ দিল্লীর সম্রাট্‌কে কীটের তুল্যও গণ্য করিতেন না প্রভৃতি কথাও পাড়াগাঁয়ের। এত বড় শক্তিশালী কবিও এই সকল পল্লী-সংস্কারের হাত এড়াইতে পারেন নাই।

 রাজা রঘুনাথ জাহাঙ্গীরের সমকালবর্ত্তী এবং পালা-গানটিও সম্ভবতঃ তাঁহার সময়ে কিংবা অব্যবহিত পরে বিরচিত হইয়া থাকিবে। তবে যে সব কাহিনী গানের আকারে দেশে দেশে প্রচারিত হয় তাহার ভাষা মধ্যে মধ্যে পরিবর্ত্তিত হওয়া অপরিহার্য্য। সুতরাং ঠিক যে আকারে প্রথম ইহা রচিত হইয়াছিল, ঠিক সেই ভাবে যে আমরা ইহা পাই নাই,—একথা বলা বাহুল্য মাত্র।

শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন