পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

 শুধু হয়বৎ আলি নহে, আশুবাবু আরও কয়েকজন গায়কের নিকট হইতে এই গানটি শুনিয়া পালাটি সম্পূর্ণ করিয়াছেন। সেই সব গায়কের নাম নিম্নে দেওয়া গেলঃ—

 ১। কোতোয়ালী থানার অন্তর্গত চর-চাকতাই গ্রাম নিবাসী হাকীম খাঁ।

 ২। বোয়ালখালী থানার অধীন পূবদিয়া গ্রাম নিবাসী গুণা মিঞা।

 ৩। রাউজান থানার অধীন লোয়াপাড়া গ্রামের পৈথান চন্দ্র দে নামক এক কৃষক।

 এই পালা গানটিতে নিম্নলিখিত স্থানগুলির উল্লেখ আছেঃ—

 ১। রঙ্গদিয়ার চর।—এই গ্রামটি দেওয়াং পাহাড়ের নীচে সুপ্রসিদ্ধ আনোয়ার গ্রামের নিকটবর্ত্তী। সম্ভবতঃ যখন গানটি বিরচিত হইয়াছিল, তখন রঙদিয়া সমুদ্রের একটা চর ছিল, এখন উহা নিকটবর্ত্তী উপকূলের সহিত মিশিয়া গিয়াছে।

 ২। দেওগাঁও।—দেওয়াং পাহাড়ের নিকট অবস্থিত। ১৭৬৪ সালে যখন চট্টগ্রামের জরীপ হয় তখন দেওগাঁও নয়টি প্রধান চাকলার মধ্যে অন্যতম ছিল। ইহা পূর্ব্বকালে একটি অতি প্রসিদ্ধ গ্রাম ছিল। এখনও এটি একটি বড় গ্রাম।

 ৩। পাঁচ গৈরা (পাঁচটি ঢেউ)—চট্টগ্রাম কক্সবাজারের উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে একটি স্থান আছে, সেখানে একটি একটি করিয়া পাঁচটি প্রবল তরঙ্গ তটভূমিকে অভিঘাত করে। এই সফেন তরঙ্গগুলি পাঁচ সঙ্খ্যায় উপনীত হওয়ার পরে একটা বিরাম হয়। কয়েক মিনিট নিস্তব্ধ থাকিয়া পুনরায় একটি একটি করিয়া পাঁচটি ঢেউ পূর্ব্ববৎ সমুদ্র-উপকূলে পৌঁছায়। এইরূপ স্বাভাবিক ঘটনার কারণ কেহ খুজিয়া পান নাই।

 ৪। কালাপানি—চট্টগ্রামের দক্ষিণে অনেকটা পর্যটন করিলে সমুদ্রের মধ্যে একটা স্থান পরিদৃষ্ট হয় তাহ ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। বস্তুতঃ নীলসমুদ্রের জল হঠাৎ কালীর বর্ণ ধারণ করিয়া সেই স্থানটিকে অতি ভীষণ করিয়া রাখিয়াছে। বহু জাহাজ ও নৌকা এই কালাপানির গর্ভে নিমজ্জিত হইয়াছে তাহার সংবাদ আমরা জানি।