পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নূরুন্নোহা ও কবরের কথা
৪৯৯

 ৫। উজানটেক—চট্টগ্রাম কক্সবাজারের নিকট উজানটেক নামক একটি রেলষ্টেশন এখনও আছে। পূর্ব্বকালে পর্ত্তুগীজ ও ব্রহ্মদেশীয় জলদস্যুদের ইহা একটি প্রধান আড্ডা ছিল।

 ৬। লালদিয়া এবং সোণাদিয়া—এখনও এই দুইটি ক্ষুদ্র দ্বীপ মৎস্যব্যবসায়ের জন্য প্রসিদ্ধ। সম্প্রতি এই দুইটি দ্বীপকে চট্টগ্রাম জেলার অন্তৰ্গত করা হইয়াছে।

 ৭। ধান-চিবান্যা ও আণ্ডার চর—এই দুইটি স্থান এখন পর্যন্ত মৎস্যব্যবসায়ের জন্য প্রসিদ্ধ। ইহারা এখন বাখরগঞ্জ জেলার অন্তৰ্গত।

 এই পালাগানটিতে হার্ম্মাদদের অত্যাচার সম্বন্ধে অনেক কথা পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের নিকটবর্ত্তী বঙ্গোপসাগরে এবং তাহার উপকূলে বহু পর্তুগীজ দস্যু ছিল তাঁহাদের সঙ্গে দেশীয় স্ত্রীলোকদের পরিণয়াদিও হইত। অনেক সময়েই ঐ দস্যুর দল বলপূর্ব্বক সুন্দরী দেশীয় রমণীদিগকে গ্রহণ করিত। ফলে তথায় একটি মিশ্র জাতির উৎপত্তি হয়। ইহারাই ফিরিঙ্গী। চট্টগ্রামের মাদারবাড়ী, ব্যাণ্ডেল, জামাল খাঁ, দেওয়াং, সাহামীরপুর, অলকারণ, গোমদণ্ডী, বজরা, বচিলিয়া, চাঙ্গাও প্রভৃতি স্থানে এখনও বহু ফিরিঙ্গী বাস করিয়া থাকে। ১৫৭৭ খৃষ্টাব্দে লিখিত কবিকঙ্কণ চণ্ডীতেই সম্ভবতঃ আমরা হার্ম্মাদ দিগের প্রথম উল্লেখ পাই। ইহাদের উৎপাতের কথা মুকুন্দরাম এই দুই ছত্রে লিপিবদ্ধ করিয়াছেনঃ—

“ফিরিঙ্গির দেশখান বাহি কর্ণধারে।
রাত্রি দিন বহি যায় হার্ম্মাদের ডরে॥”

 আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে লিখিত আলোয়ালকৃত ‘পদ্মাবৎ’ কাব্যে এই হার্ম্মাদদের উৎপাতের অনেক কথা আছে। আলোয়ালের পিতা সম্‌সের জলপথে হার্ম্মাদগণ কর্তৃক আক্রান্ত হইয়া প্রাণত্যাগ করেন। চট্টগ্রামের বহু প্রবাদে এমন কি বংশাবলীতেও এই জলদস্যুদের অত্যাচারের কথা পাওয়া যায়। আশুবাবু প্রাচীন এক বংশলতিকা হইতে এই দুইটি ছত্র প্রমাণ স্বরূপ উদ্ধৃত করিয়াছেন—

“ডাকু হার্ম্মাদের ডরে হেনকালে দেশে।
গোলাম, ধোপা, নাই বসাইল আশে পাশে॥”